অনুভব - শুভশ্রী দত্ত
“ঐ মেয়েগুলোর সাথে ঢলে ছবি তোলার সময় তো ক্লান্তি আসে না,যত ক্লান্তি আমার সাথে একটু বেরোতে বললেই; ছুটি তো পাওই না আর তুমি ছুটি চাও না, ওখানেই তো জুটিয়েছো অনেক মেয়েকে। বাড়িতে ফিরতেই চাও না”- রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কথাগুলো বললো অনন্যা।
“একদিন বাড়িতে রয়েছি, তোমার মুখ শুনতে ভালো লাগছে না অনু। তুমি তো প্রথম থেকেই জানতে আমার কাজের চাপ। সিরিয়ালের জুনিয়র আর্টিস্টকেই তো তখন হিরো বলে ডাকতে আর এখন?” – কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে হাঁপাতে লাগলো স্বস্তিক।
অনন্যা চিৎকার করে বলে উঠলো, “হ্যাঁ, ভুল হয়েছে আমার, কান মুলছি। বাড়িতে তো তোমার কেউ নেই। একটা বাচ্চা থাকলে হয়তো টান থাকতো। সে সুখও দিতে পারিনি। তুমি তাই ফুলে ফুলে ঘুরছো”।
রেগে গিয়ে হাতে থাকা টিভির রিমোটটা খাট থেকে মেঝেতে আছাড় মেরে স্বস্তিক বললো, ” উল্টোপাল্টা কথা বলবে না অনু। ফেসবুকে রিমিতা ছবিগুলো আমাকে ট্যাগ করার পর থেকে দেখছি তুমি আমার সাথে এমন করছো। বারবার সন্তানের কথা বলো, এতে আমার কষ্ট হয় না? তোমার না একটু বাড়ি থেকে বেরোনোর দরকার। চাকরি-বাকরি করো কিছু। মানসিক রোগী তৈরি হচ্ছো দিন দিন”।
“তুমি পুরো পাল্টে গেছো। এই স্বস্তিককে আমি ভালোবেসেছিলাম মনে হয় না। আমার থেকে তুমি যেন মুক্তি পেলেই বাঁচো”- কথাগুলি বলে কাঁদতে কাঁদতে পাশের ঘরে চলে গেলো অনন্যা।
স্বস্তিকের ফোন বেজে উঠলো। স্বাভাবিক হয়ে কথা বললো।
তারপর মাথা নীচু করে ভাবতে লাগলো কলেজের দিনগুলোর কথা। স্বস্তিক কলেজ লাইফ থেকে সিরিয়ালে অভিনয়ের সাথে যুক্ত জুনিয়র আর্টিস্ট হিসাবে। কলেজে সমবয়সী কিন্তু বাংলার ছাত্রী অনন্যার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়েছিলো স্বস্তিক। প্রেমে পড়ে কত রাত জেগে কবিতা লিখতো এই পাসের স্টুডেণ্ট। অনেক সাহস নিয়ে প্রপোজ করার পর কীভাবে “না”- করে দিয়েছিলো অনন্যা। তিনবছর বাদে এই অনন্যা কী না বাড়ির অমতে হাত ধরেছিলো এই জুনিয়র আর্টিস্টের। তুই থেকে তুমিতে আসতে ওদের অনেক সময় লেগেছিলো। অনন্যা কনসিভ করার পর থেকেই তুমি সম্বোধন করতো নিজেদের। তারপর মিসক্যারেজের পর অনন্যার অনেক সমস্যা দেখা দেয়। খিটখিটে হয়ে যায় অনু।
আবারও ফোন করলো রিমিতা। বললো, ” অনন্যাকে আমাদের সম্পর্কের কথা বলেছো?”
স্বস্তিক ধীরকণ্ঠে বললো, “না, বলিনি”।
“এত ভয় পাও কেন তুমি বউকে? বাড়ি থেকে বের করে দাও না “- ঝাঁঝিয়ে উঠলো রিমিতা।
“আমি এখনও কিছু ডিসিশন নিতে পারছি না রিমিতা”- স্বস্তিক দৃঢ়ভাবে জানায়।
” আমি জানতাম তুমি পিছিয়ে আসবে, তোমাদের স্বভাবই তাই”- রিমিতা ব্যঙ্গের সুরে বললো।
স্বস্তিক বললো, “আমি ভাবছি একটা বেবি অ্যাডপ্ট করবো। তারপর অনুকে নিয়ে আবার ভালোভাবে থাকার চেষ্টা করবো। তুমি আর আমাকে বিরক্ত কোরো না রিমিতা”।
রিমিতা হেসে বললো, “তাই নাকি? এত সিম্পল। কাল সেটে দেখা হচ্ছে। রিমিতা চৌধুরীকে ঠকানো অত সহজ নয়”।
স্বস্তিক ফোনের লাইন কেটে দিয়ে স্যুইচ অফ করে দিলো। বেডরুমের দরজা ধাক্কা দিয়ে বললো, “কী হলো, আমি তো রেডি। তোমাদের আর সাজ শেষ হয় না। বেরোবে বললে তো”।
না, বেডরুমের দরজা খোলেনি। শেষে ভাঙতেই হয়েছিলো। হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতে সব শেষ।
Bio:
শুভশ্রী দত্ত
রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, “সাহিত্যের অর্থই হ’ল সম্মিলন, একত্র থাকবার ভাব”। এখানে হৃদয়ের সাযুজ্যস্থাপনই মূল লক্ষ্য এবং সাথে সত্য-শিব-সুন্দরের উপাসনা। শৈশবকাল থেকেই সেই ভাবরূপ প্রাণের অনুসন্ধানী।
উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বারাসাতের বাসিন্দা। দেশের বাড়ি বর্ধমান। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতবিভাগে স্নাতকোত্তর বৃত্তিলাভ। বর্তমানে কলকাতার একটি সরকারী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংস্কৃতের শিক্ষিকা।
Tags: The Indian Rover