লেখক পরিচিতি - অনিকেত ঋক্ রায়
“কী রে কী কী বই কিনলি?”, লিফট থেকে নেমে সহকর্মী রবিনের প্রশ্ন শুনে থমকে দাঁড়িয়ে আয়কর বিভাগের অফিসার আকবর আলি বললেন, “এই কলেজ স্ট্রিট গেছিলাম, তাই কয়েকটা বই কিনলাম। এই দেখ।” কথা শেষ করে রবিনবাবুর দিকে গোটা চারেক বই এগিয়ে দিলেন তিনি।
“হুম, এই শ্রীধর রায়ের লেখা আমিও পড়েছি। বেশ ভালো লেখেন ভদ্রলোক, একবার শুরু করলে আর ছাড়া যায় না।“, বইগুলো দেখতে দেখতে বললাম রবীনবাবু।
বন্ধুর কথায় সাই দিয়ে আকবরবাবুও বললেন, “ঠিক বলেছিস। লাস্ট উইক শশুরবাড়িতে গিয়ে এঁনার লেখা একটা উপন্যাস পড়ছিলাম, বেশ ভালো; সেই কারনেই তো খুঁজে পেতে ওঁনার কিছু বই কিনলাম।“
“বেশ, পড়া হয়ে গেলে আমাকেও দিস।“, রবীনবাবুর কথায় মৃদু হেসে ঘাড় নাড়িয়ে নিজের কেবিনে ফিরলেন আকবরবাবু।
সপ্তাহখানেক পর চারটে বই পড়া শেষ হলে রবিনবাবুকে দেবার জন্য দুটো বই অফিসে নিয়ে এলেন আকবরবাবু। সকাল থেকে একের পর এক ফাইল ছেড়ে দুপুরে যখন লাঞ্চ করতে বসবেন তখন হঠাৎ খেয়াল করলেন তাঁর পিওন গদাধর দাঁড়িয়ে আছে কেবিনের সামনে।
“কিছু বলবে?”, গদাধরকে কাছে ডেকে প্রশ্ন করলেন আকবরবাবু।
কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে তারপর একটু সংকোচ নিয়ে নীচু গলায় গদাধর বললো, “না মানে, জানতে চাইছিলাম বই দুটো পড়লেন? কেমন লাগলো স্যার।“
পিওনের এই প্রশ্নে একটু অবাক হয়ে আকবরবাবু বললেন, “হ্যাঁ পড়েছি, বেশ ভালো লেগেছে।” তারপর একবার গদাধরের আপাদমস্তক নিরীক্ষন করে একটু কৌতূকের সুরে প্রশ্ন করলেন, “তুমিও পড়ো নাকী এসব বই?”
আকবরবাবুর প্রশ্ন শুনে একটু যেন থতমত খেয়ে গেলো গদাধর। তারপর একটু ম্রিয়মান গলায় উত্তর দিলো, “স্যার, ওই বই দুটো আমারই লেখা। তাই জানতে চাইছিলাম।“
গদাধরের কথা শেষ হলে দু মিনিট কোনো কথা বলতে পারলেন না আকবরবাবু, তারপর নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে একটু অবিশ্বাসের সুরে তিনি বললেন, “কিন্তু লেখকের নাম তো শ্রীধর রায় আর তোমার নাম তো…”
“আজ্ঞে, প্রকাশকমশাই বললেন এই নামটায় ভালো বিক্রি হবে। তাছাড়া আমি এমনিও ছদ্মনামেই লিখতে চেয়েছিলাম। তাই আর কি…”, বলে টেবিল থেকে একটা ফাইল নিয়ে কেবিনের বাইরে বেরিয়ে গেলো উত্তরবঙ্গ ইউনিভার্সিটির একসময়কার বাংলার গোল্ড মেডেলিস্ট কিন্তু তারপর কোনো চাকরি না পেয়ে অভাবের তাড়নায় কন্ট্রাক্টচুয়ালে এই পিওনের চাকরিতে ঢোকা বছর ত্রিশের গদাধর রায়।
লাঞ্চের পর বাইরে সিগারেট খেতে গিয়ে রবিনবাবুর সাথে দেখা হলো আকবরবাবুর। বিভিন্নরকম আলোচনার পর রবিনবাবু শ্রীধর রায়ের লেখা বইগুলো পড়া হলো কীনা জানতে চাইলে আকবরবাবু হালকা কেশে নিয়ে গলাটা পরিষ্কার করে বললেন, “আর বলিস না, একদম বাজে লেখা। দুটো বই পড়ে আর পড়ি নি। ডাহা ঠকে গেলাম চারটে বই কিনে। তুই পড়তে চাইলে তোকে দিতে পারি, কিন্তু বইগুলো নিলে বেকার টাইম ওয়েস্ট তোর। আজকাল যে পারছে, সেই লিখতে শুরু করে দিচ্ছে। লেখার, লেখকের কোনোকিছুরই আর কোনো ক্লাস রইলো না। তার চেয়ে তুই মীনাক্ষী মিত্রর লেখা পড়েছিস? কাস্টমসের অফিসার, দারুন লেখেন ভদ্রমহিলা। দাঁড়া, কাল ওঁনার লেখা দুটো বই তোকে এনে দেবো, পড়ে দেখিস। লেখার ক্লাস আছে ওঁনার।“
Bio :
লেখকের জন্ম ১২ ই অক্টোবর, ১৯৯২, পচিম বঙ্গের অন্তর্গত পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শহরে। আসানসোল বি. বি কলেজ থেকে ভূগোলে অনার্স ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে এম. এ পাশ করে বর্তমানে কলকাতায় কেন্দ্রীয় সরকারের অডিট বিভাগে কর্মরত। লেখালিখির শুরু ১১ ই মে, ২০২১. বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে লেখালিখি করেন। ইতিমধ্যে কিছু লিটিল ম্যাগাজিন ও পত্রিকায় লেখা প্রকাশ পেয়েছে এবং একটি গল্প থেকে অডিও স্টোরি হয়েছে।