
সব সীমান্তের শেষে -অবন্তী পাল
সীমান্তরেখায় এখন কুয়াশাচ্ছাদিত রাত ঘনীভূত হয়েছে।
দুই প্রান্তের সৈনিকদের মধ্যে অভাবনীয়ভাবে শুভেচ্ছা আর উপহার আদান প্রদানের মাধ্যমে, গতকালই ক্রিসমাস পালন হয়েছে। এতে অবশ্য দুই দেশের সরকার অসোন্তষ প্রকাশ করেছে। আসন্ন যুদ্ধলগ্নে আবার উৎসব কিসের? যদিও আজ স্ব-স্থানে ফিরে আগের লৌহকঠিন-রূপ পুনরায় ধারণ করেছে সকলেই ।
অস্থায়ী চাতালটার নীচে ক্ষীণ আলো আঁধারিতে চাপা কথোপকথন চলছে।
‘আপনি দেখলাম কাল একটা দেশলাইবাক্সের ভেতরে একটা লকেট উপহার দিলেন ওপর প্রান্তের বয়স্ক সৈনিকটাকে। কি ব্যাপার? বিশেষ কোনো স্মৃতি?’ গম্ভীর কন্ঠে বললেন মেজর, মিলারকে উদ্দেশ্য করে।
‘আমার ছেলেবেলার স্মৃতি, তবে বাক্সের মধ্যে বিশেষ অস্ত্র ভরা আছে, আমাদের আসন্ন যুদ্ধে কাজে লাগবে’
‘কি সেটা?’
‘জানতে পারবেন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই’ রহস্যজনকভাবে হাসলো মিলার।
রাতের অন্ধকারের থেকেও বড় বিভীষিকাময় অন্ধকার বিরাজ করে মানুষের মনে। কি যে অহেতুক যুদ্ধ লাগতে চলেছে, মনে মনে উথাল পাথাল ভাবতে ভাবতে গা-ঢাকা দিয়ে, ভীত-ত্রস্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলে কৈশোরপ্রাপ্ত গ্রেগরি। এই যুদ্ধের কারণেই তার ঘর-বাড়ি জমি-জায়গা দাউদাউ করে জ্বলছে আজ। তার মা, বাবা, ভাই বোনেদের গিলে খেয়েছে সেই তপ্ত হিংসার আগুন। এই খবরটা গ্রেগরিকে তার সৈনিক দাদার কাছে পৌঁছে দিতেই হবে যুদ্ধ লাগার আগে, যেকোনো ভাবেই হোক। যাদের আহ্বানে, নিজের দেশের সীমানা পেরিয়ে নিজের জন্মভূমির বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামিল হচ্ছে তার দাদা, তারাই আজ ওদের সর্বস্ব ধ্বংস করে দিয়েছে নিমেষে। কোনক্রমে পালিয়ে এসেছে সে, আর গত বারো দিনে দুর্বিষহ বাধা বিপত্তি ভেদ করে এগিয়ে চলেছে নিজের লক্ষ্যে – সীমান্ত ভেদ করে তার দাদাকে শুধরানোর অভিপ্রায়ে। যাদের সাথে হাত মিলিয়েছে তার দাদা, তারাই যে আসলে দেশদ্রোহী, ওদের শত্রু।
গোপন এক সুড়ঙ্গপথের কথা জানতে পেরেছে গ্রেগরী, একজন গুপ্তচরের কাছ থেকে। সেটার অন্ধকার অন্তঃস্থল দিয়ে কিছুদূর এগোতেই, পায়ে একটা লকেট বাধল। মুহূর্তের মধ্যে, আকস্মিক বিস্ফোরনে খানখান হয়ে গেল চারদিক।
কথোপকথনের মাঝেই মিলার আর সৈনিকদল দেখতে পেল অনতিদূরে এক ভীষণ বিস্ফোরণ। দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। কারুর আর্তনাদ পাওয়া গেল কি? সন্তর্পনে পৌঁছল ওরা ঘটনাস্থলে। একজন সৈনিক বন্দুকের নল দিয়ে একটা জিনিস কুড়িয়ে এনে দেখাল মেজরকে। আরে! এটা তো ওর লকেট, যেটা মিলার কাল ওপ্রান্তের অচেনা সৈনিক লোকটাকে উপহার-ছলে দিয়েছিল। পর্যবেক্ষন করতে কিছুটা এগোতেই, মিলারের পায়ে বাধল নরম কিছু। উপুড় হয়ে পড়ে আছে একটা মানুষ, তার হাতে কি যেন একটা শক্ত মুঠোয় ধরা। মুঠো খুলতেই বেরিয়ে পড়ল তার লকেটের মতনই অভিন্নরুপ আরেকটা লকেট। চকিতে মানুষটাকে নিজের দিকে ঘোরাতেই, নিজের মুখচ্ছবি দেখতে পেল আতঙ্কিত মিলার, নিজের জমজ ভাই গ্রেগরী’র।