• Facebook
  • Instagram
  • Twitter
Tuesday, January 3, 2023
  • Login
  • Home
  • Archives
    • Archives
    • The Indian Rover ( Issue: December, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: October, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: June, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: March, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: December, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: November, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: October, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: September, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: August, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: July, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: June, 2021)​
    • The Indian Rover (Issue: May, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: April, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: March, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: Feb, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: Jan, 2021)
  • Categories
    • Finance
    • Science
    • Sports
    • Non Fiction
  • About
  • Contact Us
  • Submit Guest Post
    • Login
    • Account
    • Dashboard
  • Announcement
No Result
View All Result
The Indian Rover
Advertisement
  • Home
  • Archives
    • Archives
    • The Indian Rover ( Issue: December, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: October, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: June, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: March, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: December, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: November, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: October, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: September, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: August, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: July, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: June, 2021)​
    • The Indian Rover (Issue: May, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: April, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: March, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: Feb, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: Jan, 2021)
  • Categories
    • Finance
    • Science
    • Sports
    • Non Fiction
  • About
  • Contact Us
  • Submit Guest Post
    • Login
    • Account
    • Dashboard
  • Announcement
No Result
View All Result
The Indian Rover
No Result
View All Result
Home Magazine

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও ভারতীয় সাহিত্য

Tirtha by Tirtha
September 14, 2021
in Magazine, Non Fiction
0
0
SHARES
18
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

The Indian Rover (Issue: September, 2021)

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও ভারতীয় সাহিত্য - সুমন ব্যানার্জি

১.
   ভারত নিছক কোন ভূখণ্ড নয়, এটা একটা আইডিয়া বা দর্শন। সর্বাধিক প্রাচীনতম এই সভ্যতা সারা পৃথিবীকে দেখিয়েছে এক অনির্বাণ আলোকরেখা। ভারতীয় দর্শন গুরুত্ব দিয়েছে চেতনার ঊর্ধ্বগতিকে, স্থূলত্বকে নয়। ভারত সাহিত্যের কেন্দ্রে রয়েছে উপনিষদ। এই ঔপনিষদিক বা বৈদান্তিক দর্শন জীবনকে খুঁড়ে খুঁড়ে দেখেছে, অনাবৃত করেছে মানবজীবনের চরমতম সত্যকে। ভারত সাহিত্য এমন এক সমুদ্র-প্রতিম সাহিত্য যেখানে প্রায় সমস্ত ভাবনা, বিশ্বাস, চিন্তার তরঙ্গ প্রবাহিত হয়েছে।

     ঊনবিংশ শতকের উষালগ্নে বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনধারার যে নব নির্মাণ সূচিত হয়েছিল তার প্রথম কারিগর ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনিই বাংলা সৃজনশীল ও একই সঙ্গে মননশীল গদ্যের সার্থকতম স্রষ্টা। বাংলা গদ্যে আধুনিক মননকে প্রথম খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর গদ্যেই। বঙ্কিমের এই সমস্ত সৃষ্টির নেপথ্যে ছিল তাঁর অনির্বচনীয় ভারতবোধ। ভারতীয় সনাতন সভ্যতার ইতিহাস, ও বিশেষত সাহিত্য ও দর্শনের পাঠক হিসাবে মনস্ক চিন্তার ছাপ তাঁর রচনায় বিশেষত সমালোচনা মূলক গদ্যে পাওয়া যায়। একদিকে যেমন সংস্কৃত সাহিত্যের মহাকবি কালিদাসের সঙ্গে শেক্সপিয়ারের মিরান্দা ও দেসদিমোনার তুলনামূলক আলোচনা করেছেন (বাংলা ভাষায় প্রথম তুলনামূলক সাহিত্যের প্রবন্ধ) তেমনি মহাভারত, পুরাণ মন্থন করে কৃষ্ণচরিত্র-এর মতো অতুলনীয় প্রবন্ধ গ্রন্থ লিখেছেন। আবার বাংলাসাহিত্যের আদি-মধ্য যুগের বৈষ্ণব কবিদের নিয়েও আলোচনা করছেন। বঙ্কিমের দৃষ্টিতে ও রচনায় কীভাবে ভারতীয় সাহিত্য ও দর্শন অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে তা নিয়েই আমরা এই প্রবন্ধে  কিছু আলোচনা করব।

২.
    সাহিত্য ও ধর্ম এক বিষয় নয় তা বঙ্কিম জানতেন। ধর্মের উদ্দেশ্য মানুষকে নৈতিক ও আত্মিকভাবে উদ্বোধিত করা। সাহিত্য মুখ্যত সৃজনশীল: তা অনেক নতুন সম্ভাবনাকে উস্কে দেয়, কল্পনার মধ্যে দিয়ে অনেক নতুন পরিসরকে তৈরি করে। কিন্তু সুস্থ ও সুন্দর সমাজ তৈরি করা। সাহিত্য থেকে যদি ধর্ম বোধ বিযুক্ত হতে থাকে তাহলে তা সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। ধর্ম হল ভারতীয় সংস্কৃতির আত্মা—
    
“সাহিত্যের আলোচনায় সুখ আছে বটে, কিন্তু যে সুখ তোমার উদ্দেশ্য এবং প্রাপ্য হওয়া উচিত, সাহিত্যের সুখ তাহার ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। সাহিত্যও ধর্ম্ম ছাড়া নহে। কেন না, সাহিত্য সত্যমূলক। যাহা সত্য, তাহা ধর্ম্ম।… সাহিত্যে যে সত্য ও যে ধর্ম্ম, সমস্ত ধর্ম্মের তাহা এক অংশ মাত্র। অতএব কেবল সাহিত্য নহে, সেই ধর্ম্মই এইরূপ আলোচনীয় হওয়া উচিত। সাহিত্য ত্যাগ করিও না, কিন্তু সাহিত্যকে নিম্ন সোপান করিয়া ধর্ম্মের মঞ্চে আরোহণ কর।” (ধর্ম্ম এবং সাহিত্য, বিবিধ প্রবন্ধ, দ্বিতীয় খণ্ড, ২৫৮)

       ভারতীয় সাহিত্যের বিবর্তনকে যদি লক্ষ্য করা যায় তাহলে দেখবো যে তা মুখ্যত তিনভাগে বিভাজিত যথা— বৈদিক, ঔপনিষদিক ও পৌরাণিক-মহাকাব্যিক। পৌরাণিক ও মহাকাব্যিক পর্যায়ে চরিত্র সৃষ্টি, চরিত্রের আভ্যন্তরীণ ঘাত-প্রতিঘাত, নাটকীয়তা চোখে পড়ে। ভারতে অষ্টাদশ পুরাণ, একাধিক উপপুরাণ এবং মহাভারত ও রামায়ণ শীর্ষক দু’টি মহাকাব্য রচিত হয়েছে। ন্যায়-নীতি, পাপ-পুণ্য, স্বর্গ-মর্ত্য, দেব-দেবী ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় আমরা এখানে পাই। কাহিনির আকারে অনেক সহজ বোধ্যভাবে বড় কোন জীবন-দর্শন ও সত্যকে এখানে উপস্থাপিত করা হয়েছে। কাজেই জনমানসে এর আবেদন ও গ্রহণযোগ্যতা দুইই খুব বেশি। কালিদাস সহ সংস্কৃত সাহিত্যের মহারতিদের লেখায় উঠে এলো সাধারণ মানুষের জীবনের কথা, মানবিক প্রেম-বিরহ, আবেগ-অনুভূতির কথা। বঙ্কিম লিখছেন—
    
“ভারতবর্ষ ধর্ম্মশৃঙ্খলে এরূপ নিবদ্ধ হইয়াছিল যে, সাহিত্যরসগ্রাহিণী শক্তিও তাহার বশীভূতা হইল। প্রকৃতাপ্রকৃত বোধ বিলুপ্ত হইল। সাহিত্যও ধর্ম্মানুকারী হইল। কেবল তাহাই নহে, বিচারশক্তি ধর্ম্মমোহে বিকৃত হইয়াছিল— প্রকৃত ত্যাগ করিয়া অপ্রকৃত কামনা করিতে লাগিল। ধর্ম্মই তৃষ্ণা, ধর্ম্মই আলোচনা, ধর্ম্মই সাহিত্যের বিষয়। এই ধর্ম্মমোহের ফল পুরাণ। কিন্তু যেমন এক দিকে ধর্ম্মের স্রোতঃ বহিতে লাগিল, তেমনি আর এক দিকে বিলাসিতার স্রোতঃ বহিতে লাগিল। তাহার ফল কালিদাসের কাব্য নাটকাদি।” (১৯০)

৩.
    বাংলা সাহিত্যের গীতিকবিতার ধারাটির পরিপুষ্টির পশ্চাতেও বৈষ্ণবীয় ধর্ম সাধনার সবথেকে উল্লেখযোগ্য (সর্বপ্রধান বললেও অত্যুক্তি হয় না) ভূমিকা আছে। রাধা-কৃষ্ণের প্রণয় কাহিনিকে অবলম্বন করে সারা ভারত জুড়ে অজস্র গান, পদাবলী রচিত হয়েছে। যার বেশিরভাগটাই হয়েছে বঙ্গদেশে। বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যের প্রাক্-পর্যায়ের দু’জন কবি বিদ্যাপতি ও জয়দেবের লেখার মূল দিক নিয়ে বঙ্কিম সংক্ষিপ্ত অথচ চমৎকার আলোচনা করেছেন—

“বিদ্যাপতি যে শ্রেণীর কবি, তাঁহাদিগের কাব্যে বাহ্য প্রকৃতির সম্বন্ধ নাই, এমত নহে— বাহ্য প্রকৃতির সঙ্গে মানবহৃদয়ের নিত্য সম্বন্ধ, সুতরাং কাব্যেরও নিত্য সম্বন্ধ; কিন্তু তাঁহাদিগের কাব্যে বাহ্য প্রকৃতির সঙ্গে মানবহৃদয়ের নিত্য সম্বন্ধ, সুতরাং কাব্যেরও নিত্য সম্বন্ধ;… জয়দেবাদিতে বহিঃপ্রকৃতির প্রাধান্য, বিদ্যাপতি প্রভৃতিতে অন্তঃপ্রকৃতির রাজ্য।”

      বিদ্যাপতি ও জয়দেব’র হাত ধরে যে ধারাটির সূচনা হয় সেই ধারাটিই উত্তরসূরিদের যেমন- চণ্ডীদাস, গোবিন্দদাস প্রমুখর হাত ধরে আরো বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে। বাঙালির নিজস্ব শিল্পধারা ও মনোভঙ্গি সবচেয়ে ধরা পড়ে জয়দেবের লেখায়। জয়দেব বিখ্যাত ‘গীতগোবিন্দ’ সংস্কৃত ভাষাতে লিখলেও লৌকিক কাব্যরীতিকে অনুসরণ করেছেন। জয়দেব যে রাধাকৃষ্ণ প্রেম নিয়ে কাব্য রচনা করেছিলেন, তা লৌকিক অবহটঠ সাহিত্যে আগে থেকেই ছিল। জয়দেবের সৃষ্টি ছিল যুগান্তকারী: তিনি জনপ্রিয় লৌকিক গীতিকাব্যধারাকে সংস্কৃত কাব্যাকারে গ্রথিত করেছেন। গীতিকাব্যের রস ও মহাকাব্যের গঠন একত্রিত হয়েছে। পরবর্তীকালে বিদ্যাপতির পদাবলীতেও বৈষ্ণব পদাবলী ও রস সাহিত্যের ধারাকে এক অন্য মাত্রা দেন।  তিনি রাধা-কৃষ্ণের অলৌকিক প্রেমকাহিনীকে মানবিক প্রেমকাহিনী হিসেবে রূপ দিয়েছেন। নবোদ্ভিন্নযৌবনা কিশোরী রাধার বয়ঃসন্ধি থেকে কৃষ্ণবিরহের সুতীব্র আর্তি বর্ণনা বিদ্যাপতির কবিতায় উপজীব্য।জয়দেবাদিতে বহিঃপ্রকৃতির প্রাধান্য, বিদ্যাপতি প্রভৃতিতে অন্তঃপ্রকৃতির। বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যের প্রাক্-পর্যায়ের দু’জন কবি বিদ্যাপতি ও জয়দেবের লেখার মূল দিক নিয়ে বঙ্কিম সংক্ষিপ্ত অথচ চমৎকার আলোচনা করেছেন—

“জয়দেবের গীত,রাধাকৃষ্ণের বিলাসপূর্ণ; বিদ্যাপতির গীত রাধাকৃষ্ণের প্রণয়পূর্ণ।জয়দেব ভোগ;বিদ্যাপতি আকাঙ্ক্ষা ও স্মৃতি।জয়দেব সুখ,বিদ্যাপতি দুঃখ।জয়দেব বসন্ত,বিদ্যাপতি বর্ষা।জয়দেবের কবিতা উৎফুল্লকমলজালশোভিত,বিহাঙ্গমাকুল,স্বচ্ছ বারিধিবিশিষ্ট সুন্দর সরোবর;বিদ্যাপতির কবিতা দূরগামিনী, বেগবতী তরঙ্গসঙ্কুলা নদী।জয়দেবের কবিতা স্বর্ণাহার,বিদ্যাপতির কবিতা রুদ্রাক্ষমালা।…”(‘বিদ্যাপতি ও জয়দেব’;বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)

৪.
     ‘কৃষ্ণচরিত্র’ বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবন্ধ সাহিত্যের এক অনন্যোপম সৃষ্টি। ঊনবিংশ শতকের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভাবগত ভিত্তিভূমি নির্মাণে এই গ্রন্থটির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। কৃষ্ণ’কে বঙ্কিমচন্দ্র একজন জাতীয় নায়ক হিসাবে উপস্থাপিত করেছেন। অক্লান্ত কর্মার মতো তিনি মহাভারতের যুদ্ধ ও কৃষ্ণের ঐতিহাসিকতার নির্ণয় করেছেন। বঙ্কিম উপস্থাপিত করতে চেয়েছেন মহাভারতের কৃষ্ণকে। এই গ্রন্থের দু’টি অনন্য দিক হল তিনি কৃষ্ণের বহু বিবাহের ঘটনাকে মানেননি। এবং রাধা বিষয়ে বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ রেখেছেন। তবে এই সমস্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। আমরা শুধু এখানে তুলে ধরব কৃষ্ণচরিত্রের মূল দর্শনটাকে। ‘ধর্ম্মতত্ত্ব’ শীর্ষক প্রবন্ধ গ্রন্থে (গুরু ও শিষ্যের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় ধর্মের স্বাতন্ত্র্য এবং নানাবিধ তাত্ত্বিক দিক নিয়ে তিনি ধীদীপ্ত আলোচনা করেছেন) তিনি চার রকমের বৃত্তির কথা বলেছেন যথা– শারীরিকী, জ্ঞানার্জনী, চিত্তরঞ্জনী ও কার্যকারিণী। এই বৃত্তি চতুষ্টয়ের সার্থক সম্মিলন ঘটেছিল কৃষ্ণের মধ্যে। কৃষ্ণের গীতায় ( যাকে হিন্দুরা ভগবানের মুখ নিঃসৃত বাণী হিসাবে গণ্য করেন) জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ, রাজযোগ ও কর্মযোগের কথা বলা হয়েছে। কৃষ্ণ যেন এই যোগ চতুষ্টয়েরই মূর্ত প্রতীক। একজন পুরাণ-পুরুষকে ঐতিহাসিক-ব্যক্তি/পুরুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার কাজটি এত সহজ ছিল না। দীর্ঘকাল ব্যাপী অবদমিত ও দাসত্ব প্রিয় জাতি এবং বিভাজিত ও বিক্ষিপ্ত হিন্দু সমাজের ঐক্য ও উন্নতির জন্য তিনি কৃষ্ণকেই অবলম্বন করেছেন—

“আমরা মহতী কৃষ্ণকথিতা নীতি পরিত্যাগ করিয়া, শূলপাণি ও রঘুনন্দনের পদানত— লোকহিত পরিত্যাগ করিয়া তিথিতত্ত্ব মলমাসতত্ত্ব প্রভৃতি আটাইশ তত্ত্বের কচকচিতে মন্ত্রমুগ্ধ। আমাদের জাতীয় উন্নতি হইবে ত কোন্ জাতি অধঃপাতে যাইবে? যদি এখনও আমাদের ভাগ্যোদয় হয়, তবে আমরা সমস্ত হিন্দু একত্রিত হইয়া, নমো ভগবতে বাসুদেবায় বলিয়া কৃষ্ণপাদপদ্মে প্রণাম করিয়া, তদুপবিষ্ট এই লোকহিতাত্মক ধর্ম্ম গ্রহণ করিব। তাহা হইলে নিশ্চিতই আমরা জাতীয় উন্নতি সাধিত করিতে পারিব।” (৫৬৭)

    কৃষ্ণ কথিত ধর্মতত্ত্ব আমাদের কী শিক্ষা প্রদান করে? কৃষ্ণ আমাদের শেখান অহিংসা পরম ধর্ম। ধর্মের প্রয়োজন ব্যতীত যে হিংসা তা থেকেই বিরতিই পরম ধর্ম। নতুবা হিংসাকারীর নিবারণের জন্য হিংসা অধর্ম নয় বরং পরম ধর্ম। এখানেই উঠে আসে নিষ্কাম কর্ম প্রসঙ্গ। এই ভাবসূত্রই পরিব্যক্ত হয়েছে ‘আনন্দমঠ’ ও ‘দেবী চৌধুরাণী’ উপন্যাস। বঙ্কিম লিখছেন যে— “এই কথা স্পষ্টীকৃত করিবার জন্য শ্রীকৃষ্ণ অর্জ্জুনকে বলাকের ইতিহাস শুনাইলেন। তাহার স্থূল তাৎপর্য্য এই যে, বলাক নামে ব্যাধ, প্রাণিগণের বিশেষবিনাশহেতু এক শ্বাপদকে বিনাশ করিয়াছিল, করিবমাত্র তাহার উপর ”আকাশ হইতে পুষ্পবৃষ্টি নিপতিত হইতে লাগিল, অপ্সরোদিগের অতি মনোরম গীত-বাদ্য আরম্ভ হইল, এবং সেই ব্যাধকে স্বর্গে মনোনীত করিবার নিমিত্ত বিমান সমুপস্থিত হইল।” ব্যাধের পুণ্য এই যে, সে হিংসাকারীর হিংসা করিয়াছিল।”

    ধর্মের প্রয়োজন ও অপ্রয়োজন কী? এই নিয়েও বিস্তর বিভ্রান্তি আছে। ধর্মের প্রয়োজনেই সবচেয়ে বেশি মানুষ পৃথিবীতে মরেছে। এই প্রসঙ্গে কৃষ্ণ বলছেন যে— “বরং মিথ্যা বাক্যও প্রয়োগ করা যাইতে পারে, কখনই প্রাণিহিংসা করা কর্ত্তব্য নহে”। অহিংসা ও সত্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল অহিংসা। বঙ্কিম পাশ্চাত্যের হিতবাদের দ্বারা প্রণোদিত হয়েছিলেন। যার সঙ্গে ভারতের কৃষ্ণ কথিত ধর্ম তত্ত্বের সাযুয্য তিনি খুঁজে পেয়েছেন। ভারত কখনই যুদ্ধ বিমুখ ছিল না। বরং কৃষ্ণ বারবার যুদ্ধের কথা বলছেন এবং তা ধর্মের প্রয়োজনে বৃহত্তর স্বার্থে। গীতা যার প্রোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।(৫৬৫-৫৬৭)

৫.
     তন্ত্রে সমাচ্ছন্ন এই বঙ্গদেশ (অখণ্ড বঙ্গদেশ) বঙ্কিমচন্দ্র এটা যথার্থই উপলব্ধি করেছিলেন।’কমলাকান্তের দপ্তর’-এর ‘আমার দুর্গোৎসব’ শীর্ষক ছোট অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখাটির দিকে অনেকই নজর দেন না।সেখানে আবেগ-বিহ্বল বঙ্কিম লিখছেন – “এই সপ্তমীর শারদীয়া প্রতিমা ! জলে হাসিতেছে, ভাসিয়েছে , আলোক বিকীর্ণ করিতেছে ! এই কি মা ? হাঁ, এই মা।চিনিলাম, এই আমার জননী জন্মভূমি — এই মৃণ্ময়ী — মৃত্তিকারূপিণী — অনন্তরত্নভূষিতা — এক্ষণে কালগর্ভে নিহিতা।রত্নমণ্ডিত দশ ভুজ — দশ দিক্ — দশ দিকে প্রসারিত তাহাতে নানা আয়ুধরূপে নানা শক্তি শোভিত ; পদতলে শত্রু- বিমর্দ্দিত বীরজন কেশরী শত্রু নিষ্পীড়নে নিযুক্ত ! … এসো মা গৃহে এসো — ছয় কোটি সন্তানে একত্রে , এক কালে , দ্বাদশ কোটি কর যোড় করিয়া, তোমার পাদপদ্ম পূজা করিব।ছয় কোটি মুখে ডাকিব, মা প্রসূতি অম্বিকে ! … শত্রুবধে দশভূজে দশপ্রহরণধারিণি !…”

    এরপর কমলাকান্ত গাইবে — “জয় জয় জয় জয়া জয়দাত্রি। / জয় জয় জয় বঙ্গজগদ্ধাত্রি।।” এরপর লেখা ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের সেই বিখ্যাত দৃশ্য (প্রথম খণ্ডের একাদশ পরিচ্ছেদ) যেখানে ব্রহ্মচারী সত্যানন্দ মহেন্দ্রকে দেখাচ্ছেন চতুর্ভুজ নারায়ণ ও লক্ষ্মী সরস্বতীর মূর্তি। ব্রহ্মচারী জিজ্ঞাসা করলেন বিষ্ণুর কোলে কী আছে দেখেছো ? মহেন্দ্র বললেন দেখেছি কিন্তু কে উনি ? প্রত্যুত্তরে দ্ব্যর্থহীন ভাবে বললেন ‘মা’। মহেন্দ্র বললেন  মা কে ? ব্রহ্মচারী বললেন ‘আমরা যাঁর সন্তান’।এটা শুধুই উত্তর নয়।অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে যেন উঠে আসা এই কথার সঙ্গে মিশে আছে অনিঃশেষ শ্রদ্ধা ও অতুল গৌরববোধ।এই সন্তানদের কিন্তু সন্ন্যাসী নয়।

       এরপরের দৃশ্যকল্পগুলো আনন্দমঠের পাঠকদের পরিচিত।দেবী আদ্যা শক্তির তিন প্রকাশ জগদ্ধাত্রী (‘মা – যা ছিলেন’), কালী (‘মা যা হইয়াছেন’) ও দুর্গা-এর (মা যা  হইবেন’) মূর্তি দেখালেন ব্রহ্মচারী।এরপর মহেন্দ্র ও ব্রহ্মচারী দু’জনেই শ্রী শ্রী চণ্ডীর বিখ্যাত প্রণাম মন্ত্র উচ্চারণ করে সশ্রদ্ধ প্রণতি জানালেন দেবীর উদ্দেশে – ‘সর্ব্বমঙ্গল-মঙ্গল্যে…’। বঙ্কিম বিরচিত ‘বন্দেমাতরম্’-এ(দশম পরিচ্ছেদ) ‘ত্বং হি দুর্গা’ লিখলেন। লক্ষনীয় যে ত্বং হি দুর্গা অর্থাৎ তুমিই দুর্গা। দেশমাতাই হলেন দুর্গা।

     আসলে ভারত তথা বাঙালির ধর্মসাধনার ঐতিহ্য ও পরম্পরা বিষয়ে বঙ্কিম অত্যন্ত আগ্রহী ও মনস্ক পাঠক ছিলেন।বঙ্গদেশ মাতৃতান্ত্রিক।বাঙালির মনন চেতনের সঙ্গে অন্তর্লীন হয়ে আছে তান্ত্রিক ঐতিহ্য।শাক্ত আরাধনা বাঙালির ঘরে ঘরে হয়ে এসেছে এবং অদ্যাবধি তা সমান জনপ্রিয়। সর্বোপরি তা ভবিষ্যতেও হবে।কাজেই বঙ্কিমের জাতীয়তাবাদ কোন বকচ্ছব জাতীয়তাবাদ ছিল না। ধর্ম চেতনাকে বিযুক্ত করে কোন জাতীয়তাবাদী চেতনা কখন দাঁড়াতে পারেনি ও পারবেও না। এবং তত্ত্বত ও ব্যবহারিক কোন দিক থেকেই পারে না। বাঙালির এই শাক্ত ও মাতৃতান্ত্রিক ঐতিহ্যই সশস্ত্র সংগ্রামের অকুতোভয় চিত্তে ঝাঁপিয়ে পড়ার দুর্নিবার প্রেরণা সঞ্চার করেছিল।দেশকে মা হিসাবে বন্দনা করার মধ্যেই রয়েছে এই ভাবনা। ‘কৃষ্ণচরিত্র’-এ মহাভারতের কৃষ্ণকে তিনি জাতীয় নায়ক হিসাবে তুলে ধরলেন।কারণ তাঁর মধ্যেই চতুর্বিধ বৃত্তির সমন্বয় ঘটেছিল।কখন করলেন ? চরমপন্থী অভ্যুত্থানের সময়।যে চরমপন্থী অভ্যুত্থানের আঁতুড়ঘর ছিল এই বঙ্গদেশই ! এই পথেই ভবিষ্যতে আসবেন আর একজন মহাশাক্ত শ্রী অরবিন্দ। কিন্তু সে অন্য ইতিহাস।

৬.
    যে মানুষটা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভাবগত ভূমিকে প্রথম তৈরি করে দিয়ে গেলেন, আসমুদ্রহিমাচল উদ্বেলিত ও উদ্বোধিত হল যাঁর জাতীয়তাবাদের বীজ মন্ত্রে তাঁকে বাদ দিয়ে যাঁরা বাঙালিয়ানা নিয়ে কথা বলতে আসাটাই চূড়ান্ত অর্থহীন এবং হাস্যকর। ভারতীয় ধর্মবোধ ও স্বদেশী চেতনা বঙ্কিমের সাহিত্য সৃষ্টি মধ্যে কতখানি অন্তঃস্যূত ছিল তা সংক্ষেপে এখানে দেখানো হল। তবু তাঁর ‘উত্তরচরিত’ ও উপন্যাসের প্রসঙ্গ অনালোচিত থেকে গেল কারণ এত বিস্তৃত আলোচনা এখানে সম্ভব নয়। বঙ্কিম যুগপুরুষ। যুগপুরুষদের আবির্ভাব সবসময় হয় না। তিনি দাঁড়িয়ে আছেন প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মাঝখানে, ঊনবিংশ শতকের ঊষালগ্নে।।

সুমন ব্যানার্জি

(রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
স্নাতকোত্তর বাংলা প্রাক্তনী)

Tags: The Indian Rover
Previous Post

शक्तिपीठ का अर्थ एवं इक्यावन शक्तिपीठों का संक्षिप्त विवरण

Next Post

The Philosophy of the Ghats

Next Post
edit post

The Philosophy of the Ghats

Please login to join discussion

Categories

  • Privacy Policy
  • Terms and Conditions
  • Disclaimer for The Indian Rover
  • Sitemap
  • Follow us on

© 2023 JNews - Premium WordPress news & magazine theme by Jegtheme.

No Result
View All Result
  • Home
  • Archives
    • Archives
    • The Indian Rover ( Issue: December, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: October, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: June, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: March, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: December, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: November, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: October, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: September, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: August, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: July, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: June, 2021)​
    • The Indian Rover (Issue: May, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: April, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: March, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: Feb, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: Jan, 2021)
  • Categories
    • Finance
    • Science
    • Sports
    • Non Fiction
  • About
  • Contact Us
  • Submit Guest Post
    • Login
    • Account
    • Dashboard
  • Announcement

© 2023 JNews - Premium WordPress news & magazine theme by Jegtheme.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In