
রং - পারিজাত প্রীত
সাদা রংটা ভীষণ প্রিয় ছিল সুনন্দার,
শুধু প্রিয় বললে ভুল হয়,অদ্ভুত অবসেশনে ভুগতো যেন।
ছোটবেলায় খাতায় ইরেজার ঘষে ঘষে একসা…
ছবি আঁকার ক্লাসে যেতে চায় না,
দিদিমণি বলত,”কুঁড়ে, আউটলাইন করা আছে, রং ভরে না, ঠিকঠাক!”
বাবা বলত ,”পাগলী মেয়ে আমার…”জেঠিমা বলত ,”ঢং…”
বন্ধুরা করলো আঁড়ি, দোল খেলতে যায়না,
ডাকলে দেয়না সাড়া।
জেঠতুত দিদির বিয়ের সময় ,
জেঠিমার দেওয়া লাল লেহেঙ্গা টার বদলে
বেছে নিলো সাদার উপর গোলাপী কাজ করা
সালোয়ার…
সেদিন রাত্রেই তো…
ছয় মাসের মধ্যে জেঠু জেঠি পাত্র ঠিক করে
ফেলল সুনন্দার।
কেসটা তুলে নিতে হলো সুনন্দা কে,
জামাইবাবুর বন্ধুরা একটু মজা করছিল ওর সাথে,
খারাপ কোনো ইন্টেনশন ওদের ছিল না।
আর ওর বাবার ঘটনাটা নিতান্তই অ্যাকসিডেন্ট!
জেঠিমার দেওয়া লাল লেহেঙ্গা তেই বিয়েটা
হয়ে গেলো ওর…
কাঁচের টুকরো আর বাবার রক্ত লেগে থাকা
সালোয়ারটা আর দেখেনি সুনন্দা।
তবুও দিনগুলো আস্তে আস্তে স্বাভাবিক
হয়ে উঠছিল, দুজনের ছোট্ট সংসারে।
অভাব ছিল, অভিযোগ না…
উত্তরবঙ্গের ছোট্ট স্কুলটার আপন ভোলা
মাষ্টারমশাইটি, সফল হয়েছিল
সেই রাতের স্মৃতিটাকে হাসি দিয়ে
মুছে দিতে…
বেশতো চলছিল দিনগুলো,
দুজন থেকে তিনজন হতে চলেছে তারা…
“যদি ছেলে হয় নাম হবে শুভ্র, আর যদি
মেয়ে হয় তবে শ্বেতা”
তারিখটা ছিল দোসরা আগস্ট,
ফোন এলো হঠাৎ…
সুনন্দার জীবনের তৃতীয় অ্যাকসিডেন্ট!
সাদা রংটাকে ভীষণ ভয় করছিল সুনন্দার…
কাহিনীকার ক্ষমতাবান,
প্রিয় রঙকে ঘৃণ্য হওয়া থেকে সে আটকাতে পারে,
তাছাড়া,
রং সম্পর্কে আজকাল মানুষের মন অনেক উদার…
অথচ বাস্তবের সুনন্দা আজও
কিন্তু সাদা রং ছাড়া অন্য কিছু পরে না,
কে জানে কেন…
Bio :
পারিজাত প্রীত (প্রীতম বৈদ্য) , IACS ,Jadavpur এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। নেশা গল্পের বই পড়া। লেখালেখিটা একটা ভালোবাসার জায়গা। দীর্ঘ লেখালেখি না, পছন্দ অনুগল্প কিংবা অনুকবিতা।
