
গৌড়ীয় বৈষ্ণব নারী - অরিন্দম সরকার
“মধ্যযুগ” বললেই আমাদের কানে বেজে ওঠে একটি বহুশ্রুত শব্দবন্ধ : “মধ্যযুগীয় বর্বরতা”। অবচেতনেই আমরা মধ্যযুগের সাথে “বর্বরতা”, “অশিক্ষা”,” অবক্ষয়” প্রভৃতি অন্ধকার দিকগুলিকে সমার্থক করে ফেলেছি। এটি অমূলকও নয়। মধ্যযুগে সার্বিক সমাজজীবন বিশেষতঃ নারীর অবস্থান ও অধিকার গভীর অবক্ষয়ের সম্মুখীন হয়েছিল। নারী স্বাধীনতা বা প্রগতিশীলতা তো দূর; একদিকে বাল্য বিবাহ, পর্দাপ্রথা, সতীদাহের মত কুপ্রথা; অন্যদিকে অশিক্ষা, কুসংস্কার আর কূপমণ্ডুকতায় স্থবির হয়ে উঠেছিল সাধারণ নারীজীবন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে সেই সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলার বৈষ্ণব সমাজের নারীরা সমকালীন সমাজের অন্ধকার দিকগুলির বিপরীতে হেঁটে ব্যতিক্রমী নজির গড়েছিলেন, ভেঙেছিলেন অন্ধসংস্কারের কঠিন নিগড়। সে ইতিহাস পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে অনুস্যূত হয়েছে বৈষ্ণব সাহিত্যের পরতে পরতে। তারই কিয়দংশ এই প্রবন্ধে আলোচিত হবে।
মূল আলোচনায় প্রবেশের পূর্বে অতি সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থে নারীর মর্যাদা কীরকম ছিল। ভারতবর্ষে নারীর অবস্থান সুদূর বৈদিক যুগ থেকেই অতি মহিমান্বিত। বেদ এবং বেদানুগ গৃহ্যসূত্র, শ্রৌতসূত্রাদিতে নারীস্বাধীনতা তথা সমানাধিকারের উজ্জ্বল চিত্র দেখা যায়। বৃহদারণ্যক উপনিষদের ৬৷৪৷১৭ (অথ য ইচ্ছেদ্ দুহিতা…) মন্ত্রে বিদুষী কন্যাসন্তান লাভের জন্য তিলোদন ভোজনের কথা বলা হয়েছে। ঋগ্বেদ ১০৷১৫৯৷৩, ৮৷৩১৷৮ এবং ৬৷৭৫৷৫ মন্ত্রে পুত্র-কন্যা উভয়েরই সমান সমৃদ্ধি ও অধিকারের কথা রয়েছে। গোভিল পরিশিষ্ট শ্রদ্ধা কল্পের কোলকাতা সংস্করণ, পৃঃ ১৮৬, পারস্কর গৃহ্যসূত্র ১৷২১, আশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র ২৷১২৫, আপস্তম্ব গৃহ্যসূত্র ৬৷১২, কাঠক গৃহ্যসূত্র ২৷১-২ মন্ত্রে কন্যাসন্তান লাভের জন্য বিশেষ সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং একথা অবিসংবাদিত ভাবে সত্য যে, শ্রুতি ও শ্রৌত সাহিত্য কেবল পুত্রলাভের কথা বলেননি। সেখানে কন্যাও পুত্রের মতোই অভিপ্রেত ও সমাদৃত। মহাভারত ১৩৷১১৷১৪ শ্লোকে অবিবাহিতা নারীর প্রসঙ্গে বলা হয়েছে: “নিত্যং নিবসতে লক্ষ্মীঃ কন্যকাসুপ্রতিষ্ঠিতা”- অর্থাৎ, কন্যার মধ্যে লক্ষ্মী নিত্য বাস করেন। একই কথা বিষ্ণুস্মৃতির ৯৯৷১৪ তেও রয়েছে। রামায়ণ ৬৷১৩৮৷৩৮ ও ৬১ শ্লোকে দেখা যায়, বনবাস থেকে প্রত্যাগত শ্রীরামচন্দ্র সর্বপ্রথম অবিবাহিতা কন্যাদের হাতে অভিষিক্ত হচ্ছেন। অথর্ব বেদ ৯৷৫৷১৮ মন্ত্র: “ব্রহ্মচর্যেণ কন্যা যুবানং বিন্দতে পতিম্” থেকে বোঝা যায়, সেযুগে ছেলেদের সাথে সমান তালে মেয়েরাও ব্রহ্মচর্যাশ্রমে যেতেন, অধ্যয়ন করতেন। রামায়ণেও ৫৷১৫৷৪৮ শ্লোকে সীতাদেবীকে বৈদিক সন্ধ্যা করতে দেখা যায়। পতঞ্জলীর মহাভাষ্যে “কাশকৃৎস্ন” নামক এক বিদুষী নারীর কথা পাওয়া যায়। যিনি মীমাংসা শাস্ত্রে “কাশকৃৎস্নী” নামক একটি ধারা সৃষ্টি করেন। ঋগ্বেদ ১৷১৭৯ সূক্তের দ্রষ্ট্রী লোপামুদ্রা, একইভাবে বিশ্ববারা ৫৷২৮ সূক্তের, নিবাবরী ৯৷৮১৷১১-২০ মন্ত্রের এবং ঘোষা ১০৷৩৯-৪০ সূক্তের দ্রষ্ট্রী। দর্শনশাস্ত্রের মত যুক্তিগ্রাহ্য আলোচনায় বিবাহিত নারীরাও অনুরক্ত ছিলেন। মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্যের পত্নী মৈত্রেয়ীর নাম এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। বিদেহরাজ জনকের সভায় যাজ্ঞবল্ক্যের সাথে ব্রহ্মবাদিনী গার্গীর আধ্যাত্মিক আলোচনা বৃহদারণ্যক উপনিষদের একটি মূল প্রতিপাদ্য। ঋগ্বেদ বলছেন, নারীরা পতির সাথেই শুধু নন, একাকীও যজ্ঞ করতেন। “রূদ্রযাগ” এমনিই একটি যজ্ঞ, যেটি কেবল নারীদের দ্বারাই অনুষ্ঠিত হত। স্ত্রী-পুরুষ সমানাধিকারের আরেকটি সুন্দর দৃষ্টান্ত হল “হারীত ধর্মসূত্রে” ব্রহ্মবাদিনী নারীদের উপনয়নের বিধানও রয়েছে।
সময় যত এগোতে থাকে ধীরে ধীরে অন্ধকার গ্রাস করতে থাকে সমাজকে। আর নারীরাও তাঁদের মর্যাদাময় আসন থেকে ক্রমশঃ বিচ্যুত হতে থাকেন। এরপর ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে শ্রীমন্মহাপ্রভু চৈতন্যদেব বঙ্গদেশ অলংকৃত করে শচীগর্ভসিন্ধু থেকে নবদ্বীপের আকাশে মর্ত্যনয়নের গোচরীভূত হন; যাঁর লোকোত্তীর্ণ চমৎকারিত্ব দার্শনিক সিদ্ধান্তসূর্য আর প্রেমচন্দ্রমার যুগপৎ মেলবন্ধনে অচলায়তন সমাজের অন্ধকার দূর করার পাশাপাশি তাপদগ্ধ জনচেতনাকে স্নাত করেছিল মধুর জোছনার স্পর্শে। তিনি প্রেম-পুরুষোত্তম; ঔদার্য আর কারুণ্যের ঘনীভূত প্রকাশমূর্তি। তাঁর প্রচারিত ধর্মদর্শন এত বিশাল, এত গভীর যে এমন কোন সমস্যা নেই যার সমাধান তাঁর ধর্মদর্শন দ্বারা অসম্ভব। যদিও শ্রীমন্মহাপ্রভু পৃথক পৃথকভাবে সমস্ত সমস্যার সমাধান করেননি; তিনি তাঁর অনুগামীদের হৃদয়গ্রাম যে অধ্যাত্মবোধের তার-সপ্তকে বেঁধে দিয়েছিলেন, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আত্মমাধুর্যে জগতকে স্নিগ্ধ করেছিল। তাঁর অনুসারী নারীরা কীভাবে সেযুগের পটভূমিকায় দাঁড়িয়েও পুরুষের সমমর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন তা সহজেই বোঝা যায় কিছু দৃষ্টান্তের মাধ্যমে।
সাধারণ হিন্দু সমাজে ধারণা আছে যে, স্ত্রীলোকেরা শালগ্রাম শিলা স্পর্শ করতে পারবেন না। অথচ শ্রীমন্মহাপ্রভুর ঘনিষ্ঠ পরিকর শ্রীসনাতন গোস্বামী তথা শ্রীগোপাল ভট্ট গোস্বামী রচিত বৈষ্ণব স্মৃতি “হরিভক্তিবিলাস”-এর পঞ্চম অধ্যায়ে ২২৩-২২৪শ্লোকে নারীদেরকেও শালগ্রামার্চনের অধিকার দেওয়া হয়েছে। “স্ত্রীশূদ্রকর সংস্পর্শো বজ্রাদপি সুদুঃসহ” – অর্থাৎ, স্ত্রীলোক ও শূদ্র শালগ্রাম স্পর্শ করলে তা শিলারূপী বিষ্ণুর শ্রীঅঙ্গে বজ্রপাতের থেকেও কঠিন আঘাত দেয়- এই বাক্যকে খণ্ডন করে “হরিভক্তিবিলাস”-এর “দিগ্-দর্শিনী” টীকায় শ্রীসনাতন গোস্বামী বিভিন্ন শাস্ত্র থেকে একাধিক প্রমাণ উদ্ধার করে দেখিয়েছেন, “দ্বিজৈঃ স্ত্রীভিশ্চ শূদ্রৈশ্চ পূজ্যো ভগবতপরৈঃ” – অর্থাৎ, বৈষ্ণবমাত্রেই শালগ্রাম অর্চনের অধিকারী, তা তিনি স্ত্রীদেহে থাকুন, কিংবা শূদ্রদেহে। কিছু কিছু স্মৃতিশাস্ত্র নারীদের “গুরু” হতে বাধা দিলেও, গৌড়ীয় স্মৃতিকার গোপাল ভট্ট গোস্বামী সেসব নিষেধবাক্যকে “হরিভক্তিবিলাস”-এ গ্রহণ করেননি। পাঁচশো বছর আগে বৃন্দাবনের গোস্বামীবর্গের এ দূরদর্শিতা সত্যিই প্রশংসনীয়।
আর্যজীবন মূলতঃ চারটি আশ্রমে বিভক্ত। এর মধ্যে চতুর্থাশ্রম সন্ন্যাস সর্বাপেক্ষা কঠিন। ঠিক একারণেই সাধারণতঃ নারীদেরকে সন্ন্যাস দান করা হয় না। তাই বলে নারীরা সন্ন্যাসের অযোগ্য নন। স্মৃতিকার গোপাল ভট্ট গোস্বামী তাঁর একটি গ্রন্থে নারীদের সন্ন্যাসের কথা বলেছেন। “সংস্কার দীপিকা” ২১ ও ২২ শ্লোকে নারীদের সন্ন্যাস প্রতিপাদিত হয়েছে। প্রসঙ্গতঃ গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শন কখনোই নারী পুরুষে ভেদভাব পোষণ করেন না। উভয়েই জীবাত্মা। পার্থক্য কেবল বাহ্য দেহাবরণে। তাই নারীরাও পুরুষদের মতোই ধর্মপ্রচারে নিযুক্তা হতেন। পেতেন নেত্রীপদ। অগণিত স্ত্রী-পুরুষকে বাৎসল্যরসের অমোঘ আকর্ষণে টেনে আনতেন মহাপ্রভুর পতাকাতলে। এই প্রসঙ্গে গৌড়ীয় বৈষ্ণব জগতে যে নারী ব্যক্তিত্ব স্বমহিমায় ভাস্বর তিনি হলেন ঈশ্বরী জাহ্ণবা। তিনি প্রভু নিত্যানন্দের ভার্যা তথা শক্তিস্বরূপিণী। অসংখ্য পদকর্তা নিজেদের পদের ভণিতায় পরম শ্রদ্ধায় এঁর নাম উল্লেখ করেছেন। মহাপ্রভুর অপ্রকটের পর তিনিই হয়ে উঠেছিলেন গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের একচ্ছত্র নেত্রী। ঠাকুর নরোত্তম, পদকর্তা জ্ঞানদাস, বৃন্দাবনস্থ শ্রীল রূপ গোস্বামী, সনাতন গোস্বামীর মত নক্ষত্রবৃন্দও শ্রদ্ধায় এঁর সামনে সাষ্টাঙ্গ দন্ডবৎ করতেন। আজকাল দুর্গাপুজায় “নারী পুরোহিত” প্রথার চল হচ্ছে। গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজে পাঁচশো বছর আগেই এই প্রথার শুরু হয়ে গেছিল। ঈশ্বরী জাহ্ণবা শুধু দীক্ষাদাতা গুর্বী(স্ত্রী গুরু)-ই ছিলেন না; খেতুড়ির কিংবদন্তী বৈষ্ণব সম্মেলনে তিনিই ছিলেন মূল নেত্রী। শুধু খেতুড়ি সম্মেলনেই ইনি ছয় মূর্তি কৃষ্ণ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন, এছাড়াও বহু মন্দির এবং ভগবদ্বিগ্রহ এঁর পৃষ্ঠপোষকতায় ও নেতৃত্বে নির্মিত হয়। বৃন্দাবনে প্রাচীন কৃষ্ণবিগ্রহের বামে শ্রীরাধিকার বিগ্রহ স্থাপন জাহ্ণবা দেবীরই কৃতিত্ব। নিত্যানন্দ তনয় বীরচন্দ্র এঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। অদ্যাবধি গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণ পরম শ্রদ্ধায় “জাহ্ণবা দেবী”-র নাম স্মরণ করেন। বৃন্দাবনে শ্রীরাধাকুণ্ডের তটে মা জাহ্ণবার “বৈঠক” স্থাপিত আছে।
ঈশ্বরী জাহ্ণবার পরেই যে বৈষ্ণব নারীর নাম স্মরণপথে উদিত হয়, তিনি পঞ্চতত্ত্বের অন্যতম শ্রীঅদ্বৈত আচার্যের সুযোগ্যা পত্নী “সীতাঠাকুরাণী”। স্বামীর প্রকটকালেই তিনি “জগৎ প্রসিদ্ধা আর্যা”। ভক্তবৃন্দের কাছে তিনি “আচার্যানী”। কবিকর্ণপূর গোস্বামী তাঁকে “যোগমায়া” দেবীর অবতার বলেছেন। প্রভু অদ্বৈত আচার্যের মত তিনিও দীক্ষা দিতেন। প্রভু অদ্বৈতের অপ্রকটের পর বৈষ্ণব সমাজ অনেকাংশেই তাঁর ছত্রছায়ায় আশ্রয় নেন। সীতাঠাকুরাণীর জন্মবৃত্তান্তটিও অলৌকিক। পিতা নৃসিংহ ভাদুড়ি পদ্মবনে তাঁকে খুঁজে পান। সাদরে গ্রহণ করে তাঁকে গৃহে নিয়ে আসেন। একইদিনে নৃসিংহ ভাদুড়ির পত্নীও “শ্রীদেবী” নাম্নী একটি কন্যা প্রসব করেন। একইসঙ্গে দুই কন্যা লাভ সস্ত্রীক নৃসিংহ ভাদুড়িকে আনন্দিত করেছিল। দলে দলে লোক এসেছিলেন যমজ কন্যাকে দেখতে। যেখানে একবিংশ শতকেও “কন্যাভ্রূণ হত্যা”, “কন্যাসন্তানের প্রতি অনীহা” প্রভৃতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে হয়, সেখানে পাঁচশো বছর আগে বৈষ্ণব সমাজে কন্যাসন্তানের এই সমাদর আমাদের মুগ্ধ করে।
বৈষ্ণব জগতে নারীর স্থান কত উচ্চে ছিল, তার আরেকটি দৃষ্টান্ত আমরা “চৈতন্যভাগবত”-এর লেখক শ্রীল বৃন্দাবন দাস ঠাকুরের ক্ষেত্রে দেখতে পাই। বৈষ্ণবজগতে ঠাকুর বৃন্দাবন দাস “বেদব্যাস”-এর অবতার বলে পূজিত হন। “চৈতন্যভাগবত”-এর মত এত গুরুত্বপূর্ণ ও বহুমানিত গ্রন্থের রচয়িতা ঠাকুর বৃন্দাবন দাস নিজের পিতা নন, বরং মাতার নামে পরিচয় খ্যাপন করতেন। মহাপ্রভুর ঘনিষ্ঠ পরিকর শ্রীবাস পণ্ডিতের ভ্রাতুষ্পুত্রী ছিলেন নারায়ণী দেবী। শৈশবে শ্রীমন্মহাপ্রভুর কৃপাও পেয়েছিলেন। শ্রীমন্মহাপ্রভুর উচ্ছিষ্ট ভোজন করে বালিকা নারায়ণীর শরীরে অষ্টসাত্ত্বিক বিকারও দেখা দিয়েছিল। চৈতন্যভাগবত”-এর এরূপ বর্ণনা থেকে বোঝা যায় শৈশব থেকেই তিনি পরম ভক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে এঁর বিবাহ হয় কুমারহট্ট নিবাসী “বৈকুণ্ঠদাস”-এর সাথে। “প্রেমবিলাস”-কার নিত্যানন্দ দাস জানিয়েছেন, ঠাকুর বৃন্দাবন দাস গর্ভে থাকাকালীন তাঁর পিতা বৈকুণ্ঠদাস পরলোক গমন করেন। যদিও সমগ্র “চৈতন্যভাগবত” -এ কোথাও ঠাকুর বৃন্দাবন দাস স্বীয় পিতার নাম উল্লেখ করেননি। সর্বত্র তিনি “নারায়ণী-পুত্র ” বলেই পরিচয় দিয়েছেন। পাঁচশো বছর পূর্বের এরূপ প্রগতিশীলতা সত্যিই মুগ্ধ করে।
সেযুগে সাধারণ নারীদের থেকে বৈষ্ণব নারীরা অধিক শিক্ষিতা ও প্রগতিশীলা হতেন। যেমন গৃহকর্মে অত্যন্ত নিপুণা; তেমনি পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মহাপ্রভুর বাণী প্রচার করতেন তাঁরা। শ্রীবাস গৃহিণী মালিনী দেবীর কথা এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে। গৌর-নিত্যানন্দকে তিনি “পুত্র ” রূপে দেখতেন। প্রভুযুগলও তাঁকে “মা” বলে ডাকতেন। বিশেষ করে নিত্যানন্দ প্রভু তাঁর কাছে পুত্রবৎ চাপল্য প্রদর্শন করতেন। কখনো শ্রীবাস গৃহিণীর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়তেন, কখনো বা পুত্রভাবে মালিনীর স্তনপান করতেন। মালিনী নিজ হাতে খাইয়ে না দিলে নিত্যানন্দ প্রভু ভোজন করতেন না। চৈতন্যভাগবত গ্রন্থে এর স্পষ্ট ছবি এঁকেছেন ঠাকুর বৃন্দাবন দাস। ভক্তবৃন্দের সাথে শ্রীবাস ঘরণী মালিনীর এই প্রকার বাৎসল্যপ্রীতির আদানপ্রদান প্রমাণ করে বৈষ্ণব গৃহে নারীর অবস্থান কতখানি স্বাধীন ছিল।
শ্রীবাস পণ্ডিতের গৃহের পরিচারিকা “দুঃখী” শ্রীমন্মহাপ্রভুর কৃপা পেয়েছিলেন। যে যুগের পটভূমিকায় আমরা “দাসদাসী” কেনাবেচার মত ঘৃণ্য প্রথাকে দেখতে পাই, সেযুগে বৈষ্ণব গৃহের এক অখ্যাতা দাসী দুঃখী নিজের অপরিসীম ভক্তির কারণে চৈতন্যজীবনী “চৈতন্যভাগবত” -এর পাতায় ঠাঁই পেয়েছিলেন। শুধু কি তাই? স্বয়ং মহাপ্রভু “দুঃখী”-র নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন “সুখী”। একে যদি প্রগতিশীলতা না বলি, তবে কাকে বলব ? কোন বিশেষ যোগ্যতা নয়, শিক্ষাদীক্ষা, উচ্চকুল, সামাজিক মর্যাদা কিচ্ছুটি নয়; কেবল অনন্যা ভক্তির বলেই একজন অন্ত্যজ নারীও বৈষ্ণব জগতে কত উচ্চ স্থান পেতে পারতেন তা শ্রীবাস গৃহের পরিচারিকা “দুঃখী”-র উদাহরণ থেকে বোঝা যায়।
সাধারণতঃ আমরা দেখতে পাই, বিবাহিত দম্পতি নিঃসন্তান হলে লোকসমাজ তাঁদের খারাপ চোখে দেখে। বিশেষতঃ সন্তান না হওয়াটিকে স্ত্রীলোকের অক্ষমতা মনে করে স্ত্রীটিকে নানা লাঞ্ছনা প্রদান করে; তাঁকে অমঙ্গলের চিহ্ন রূপে দেখা হয়, কোনপ্রকার শুভকার্যে তাঁর যোগদান নিষিদ্ধ হয়ে যায়। অথচ বৈষ্ণব জগতে নিঃসন্তান স্ত্রীলোক শুধু যথাযোগ্য মর্যাদাই নয়, আচার্যের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেও পারতেন। মহাপ্রভুর মাসিমাতা “সর্বজয়া দেবী” নিঃসন্তান ছিলেন। নিত্যানন্দ ঘরণী জাহ্ণবা, শ্রীনিবাস আচার্যের দুহিতা হেমলতা ঠাকুরাণীও এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য নাম। এঁরা নিঃসন্তান হলেও বৈষ্ণব জগতে উচ্চ স্থান লাভ করেছিলেন। শ্রীনিবাস দুহিতা হেমলতা ঠাকুরাণীও ছিলেন অত্যন্ত তেজস্বিনী বৈষ্ণব নারী।
মহাপ্রভুর পরম অন্তরঙ্গ সাড়ে তিনজন পার্ষদের মধ্যে অর্ধজন ছিলেন শিখী মাহিতীর ভগিনী বৃদ্ধা মাধবীদেবী। পরম তপস্বিনী, উচ্চশিক্ষিতা এই রমণী নিজে পদরচনা করতেন। গৌরলীলা বিষয়ক এঁর কয়েকটি পদ “পদকল্পতরু ” গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। অনন্যা ভক্তির কারণে ইনি বৈষ্ণব সমাজে “অর্ধপুরুষ” রূপে বিবেচিত হতেন। “সংস্কার দীপিকা”-য় এঁর দৃষ্টান্ত দিয়েই গোপাল ভট্ট গোস্বামীপাদ স্ত্রীদেরও সন্ন্যাস আশ্রমের অধিকার প্রদান করেছেন। কবিকর্ণপূর গোস্বামী এঁকে “কলাকেলী” মঞ্জরী বলেছেন। কারো মতে ইনি অবিবাহিতা ছিলেন, আবার কেউ কেউ এঁকে বিধবা বলেছেন। একাধিক উদাহরণ থেকে দেখা যায়, বৈষ্ণব জগতে “সতীদাহ ” প্রথা প্রচলিত ছিল না। মহাপ্রভুর অপ্রকটের পর বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী দীর্ঘকাল প্রকট ছিলেন। প্রভু নিত্যানন্দের অপ্রকটের পর তদীয় শক্তি শ্রীজাহ্ণবা অথবা অদ্বৈত প্রভুর অপ্রকটের পর সীতাঠাকুরাণী, রাঘব-ভগিনী দময়ন্তীর নাম এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
গৌড়ীয় বৈষ্ণব আন্দোলন সমাজের সর্বক্ষেত্রেই স্বীয় প্রভাব বিস্তার করেছিল। মহাপ্রভুর অন্যতম প্রিয়ভক্ত ঠাকুর হরিদাসের প্রভাবে দেহোপজীবী পতিতা লক্ষহীরা পরম শ্রদ্ধেয় বৈষ্ণবে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। ঠাকুর হরিদাসের মুখে নামসংকীর্তন শুনে তাঁর ভাবান্তর ঘটেছিল। রামচন্দ্র খাঁর ব্যবস্থায় এই অসামান্যা রূপবতী লক্ষহীরা ঠাকুর হরিদাসের বৈরাগ্য ব্রত ভঙ্গ করার জন্য গভীর রাতে যাঁর কুটীয়ার কাছে এসে তাঁকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেন। তিনদিন তিনরাত্রি চেষ্টা করেও ঠাকুর হরিদাসকে টলাতে না পেরে তাঁর চিত্ত পরিবর্তিত হয়। তীব্র আত্মদহন আর সাধনার প্রভাবে তিনি একসময় “পরম মোহান্তী” পদ লাভ করেন।
গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শন ও ধর্মগোষ্ঠী আজ থেকে পাঁচশো বছর আগেও যে কতখানি ঔদার্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল তা বোঝা যাবে সীতাঠাকুরাণীর দুই “বিশেষ” শিষ্যা “নন্দিনী” এবং “জঙ্গলী” -র কথা আলোচনা করলে। এঁদের বিশেষত্ব হল, এঁরা প্রথমজীবনে ছিলেন পুরুষ, পরবর্তীতে লিঙ্গ পরিবর্তনের মাধ্যমে নারী শরীর লাভ করেন (সূত্র: অদ্বৈতমঙ্গল)। ভজনবলে অনেক যোগসিদ্ধি এঁদের করায়ত্ত হয়েছিল। এঁরা এঁদের সামনে থাকা মানুষের মনের ভাব বুঝে যোগবলে নারী অথবা পুরুষ রূপ ধারণ করতে পারতেন। নন্দিনীর পূর্বনাম নন্দরাম। হরিপুরের বাসিন্দা; কায়স্থকুলে জন্ম। অদ্বৈতশক্তি সীতাঠাকুরাণী এঁকে দীক্ষা দেন। নাম হয় “নন্দিনীদাসী”। শেষজীবনে ইনি পুরীতে বাস করেন। সেখানে এঁর ভজনস্থলী “নন্দিনী মঠ” নামে পরিচিত। এবার জঙ্গলীর প্রসঙ্গে আসা যাক। বৈষ্ণব কবি নিত্যানন্দ দাস রচিত “প্রেমবিলাস” গ্রন্থের চতুর্দশ অধ্যায়ে জঙ্গলীর কিছু বৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে। জঙ্গলীপ্রিয়া দেবীর পূর্বনাম “যজ্ঞেশ্বর চক্রবর্তী”। শান্তিপুরের কাছে হরিপুর গ্রামে তিনি বাস করতেন। অদ্বৈত-শক্তি(পত্নী) সীতাঠাকুরাণীর কাছে দীক্ষা নিয়ে তদানীন্তন গৌড়ের কাছে গভীর জঙ্গলে ভজন করতেন। লোকমুখে জঙ্গলীপ্রিয়ার সন্ধান পেয়ে গৌড়ের বাদশা শিকারের ছলনায় জঙ্গলীর ভজনকুটীরের কাছে গিয়ে দেখেন এক সুন্দরী যুবতী আসনে উপবিষ্টা। কামাতুর হয়ে জঙ্গলীর সতীত্বনাশ করতে উদ্যত হন। Columbia University-র গবেষিকা Rebecca J Manring তাঁর “Reconstructing Tradition Advaita Acharya and Gaudiya Vaishnavism at the cusp of the Twentieth Century” গ্রন্থে বলেছেন, “বাদশা জঙ্গলীর বস্ত্রহরণ করতে থাকলে জঙ্গলী নিজগুরু সীতাঠাকুরাণীকে স্মরণ করতে থাকেন। অনন্তবীর্যা সীতাদেবী বস্ত্ররূপ ধারণ করে জঙ্গলীকে আবৃত করে রাখেন। শেষমেশ বাদশা বস্ত্রহরণ করতে পারেন না।” অদ্যাবধি মালদহ জেলায় “জঙ্গলীটোটা” এই ব্যতিক্রমী বৈষ্ণবের স্মারক বহন করছে।
প্রচারের আড়ালে থাকলেও মহাপ্রভুর প্রথমা পত্নী লক্ষ্মীপ্রিয়া এবং দ্বিতীয়া পত্নী বিষ্ণুপ্রিয়ার নাম বৈষ্ণব জগতে পরম শ্রদ্ধেয়। উভয়েই ছিলেন অসামান্যা রূপবতী এবং গৌরপ্রিয়া। লক্ষ্মীপ্রিয়ার অপ্রকটের পর মহাপ্রভু বিবাহ করেন বিষ্ণুপ্রিয়াকে। পরে মহাপ্রভু সন্ন্যাস গ্রহণ করলে বিষ্ণুপ্রিয়া কঠোর বৈরাগ্যে বাকি জীবন কাটান।
লক্ষ্মীপ্রিয়ার এক পরম অন্তরঙ্গ সখী ছিলেন “চিত্রলেখা”। মহাপ্রভু পূর্ববঙ্গে অর্থোপার্জনে গমন করলে পতিবিরহবিধুরা লক্ষ্মীপ্রিয়াকে সামলাতেন তিনিই। অপরিসীম সহমর্মিতা ছিল তাঁর। কেউ কেউ তাঁকে লঙ্কাপুরীতে বন্দিনী সীতাদেবীর প্রতি সহানুভূতিশীলা সরমার সাথে তুলনা করেছেন। লক্ষ্মীপ্রিয়ার সংসারের কাজেও হাতে হাতে সাহায্য করতেন চিত্রলেখা। এমনকি লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর অপ্রকটের পর সখীর দায়িত্ব কাঁধে তুলে গৌরজননী শচীমায়ের সেবাশুশ্রূষাও করতেন। বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীরও এরকম এক সখীর কথা পাওয়া যায়, তাঁর নাম কাঞ্চনা। প্রত্যেকেই ছিলেন পরম বৈষ্ণবী।
মহাপ্রভুর পার্ষদ শ্রীরাঘব পণ্ডিতের বিধবা ভগিনী দময়ন্তী দেবী ছিলেন তাঁর পরমভক্ত। মহাপ্রভুর জন্য পরম আদরে নিজ হাতে তিনি নানা সুস্বাদু ভোগ বানাতেন। মহাপ্রভু সন্ন্যাস নিয়ে নীলাচলে থাকাকালে গৌড়দেশের অগণিত ভক্ত রথযাত্রার পূর্বে নীলাচলে যেতেন। প্রিয় পরিকর রাঘব পণ্ডিত এই সময় প্রাণপ্রিয় মহাপ্রভুর জন্য প্রচুর পরিমাণে খাবার নিয়ে যেতেন। একে “রাঘবের ঝালি” বলা হত। বলাই বাহুল্য দময়ন্তী দেবীই এই ঝালির সমস্ত পদ রান্না করতেন। তাতে থাকতো নানান কাসুন্দি, আচার, মোরব্বা, আমসত্ত্ব, নাড়ু, চূর্ণ প্রভৃতি। গুরুপাক ভোজন করে যদি মহাপ্রভুর হজমে সমস্যা হয়, সেজন্য দিতেন শুকতা। মহাপ্রভুর সারাবছরের খাদ্যসামগ্রী এই দময়ন্তী দেবীই বাংলা থেকে বানিয়ে পাঠাতেন। নিখুঁত কারিগরী, দক্ষতা আর হৃদ্গত প্রেম দিয়ে তিনি এমনভাবে এসব বানাতেন যে একবছরেও সেসব নষ্ট হত না। পাকের গুণ আর পারিপাট্যে এসব অবিকৃত থাকতো। এ থেকে সহজেই অনুমেয় দময়ন্তী একাধারে গৃহকর্মনিপুণা অন্যদিকে গৌরগতপ্রাণ ছিলেন।
যে নারীচরিত্রের কথা না বললে এই আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তিনি পুঁটিয়ার রাজকুমারী শচীদেবী। আজীবন ব্রহ্মচারিণী। পণ্ডিত গদাধর গোস্বামীর প্রশিষ্যা এই মহীয়সী নারী পুরীধামে ভজন করতেন। পরবর্তীতে ইনি “গঙ্গামাতা গোস্বামিনী” নামে পরিচিতা হয়েছিলেন। অদ্যাবধি পুরীতে “গঙ্গামাতা মঠ” বিদ্যমান। পুরীর গজপতি রাজা আর পাণ্ডাদের একটা বড় অংশ এঁর থেকে দীক্ষাগ্রহণ করতেন। মধুর ও সুললিত ভাগবত পাঠের জন্য ইনি বিখ্যাত ছিলেন। ভজনপ্রভাবে অসীম অলৌকিক আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করছিলেন গঙ্গামাতা গোস্বামিনী।
প্রবন্ধের স্বল্প পরিসরে আলোচনা কেবল কয়েকটি নারীব্যক্তিত্বের মধ্যেই সীমায়িত রাখতে হল। এঁরা ছাড়াও অসংখ্য বৈষ্ণব নারী বাংলার সমাজ অলংকৃত করেছিলেন, বৈষ্ণব সাহিত্যে আমরা যাঁদের দেখতে পাই। সেযুগে দাঁড়িয়ে সমাজ সংসারের সমস্ত স্থবিরতা অতিক্রম করা সহজ কার্য ছিল না। নারীদের পিছনের সারিতে রাখার একটা স্বাভাবিক প্রবণতা সেযুগে দেখা যেত। অথচ বৈষ্ণব সমাজে নারীদের এত উচ্চ অবস্থান দেখে সত্যিই বিস্মিত হতে হয়। যেখানে মেয়ের বিয়ে দিতে না পারলে পিতা হতেন সমাজচ্যুত; সেখানে বৈষ্ণব নারীরা অবলীলায় পারতেন চিরকাল ব্রহ্মচারিণী থেকে মহাপ্রভুর আদর্শে জীবন কাটাতে। এ যেন আমাদের বৈদিক যুগের সেই “গার্গী”, “বাক্” প্রমুখা ব্রহ্মবাদিনী-দের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। শিক্ষাদীক্ষায়, আতিথেয়তা, রন্ধনকলা, বিগ্রহসেবা, বাৎসল্যে বৈষ্ণব নারীরা সাধারণ নারীদের থেকে অনেক এগিয়ে ছিলেন। তাঁরা “আচার্যা” হতে পারতেন, সম্বর্ধনাও পেতেন। “ভক্তিরত্নাকর” গ্রন্থে জাহ্ণবা দেবীর সম্বর্ধনার কথা রয়েছে। অগণিত স্ত্রী-পুরুষের সামনে অবলীলায় শাস্ত্রালোচনা করতে পারতেন। শালগ্রামার্চন থেকে শুরু করে সন্ন্যাস সর্বত্র তাঁদের অবাধ অধিকার ছিল। তবে এত স্বাধীনতা পেয়েও এই সকল বিদুষী বৈষ্ণব নারীরা স্বাধীনতার অপব্যবহার করতেন না। তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত সংযমী, পরিশীলা এবং সচ্চরিত্রের অধিকারিণী। বৈষ্ণব সমাজে স্ত্রীলোকের মর্যাদা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জাতিভেদ বিষয়েও বৈষ্ণব সমাজ ছিল অনেক উদার। এই ঔদার্যের শিক্ষাই গৌড়ীয়ার প্রাণপুরুষ মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের শিক্ষা। পাঁচশো বছর আগে এ অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছিল মহাপ্রভুর নিখুঁত দর্শনের সুষ্ঠু প্রচার ও প্রসারের ফলে। পাঁচশো বছর পূর্বেই শুধু এই শিক্ষার প্রভাবেই বৈষ্ণব নারীর এই উচ্চ আদর্শ স্থাপিত হয়েছিল। আশা করি, আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে, এই নারীপ্রগতিশীলতার যুগে গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনের প্রচার ঘটলে সমাজের অনেক অন্ধকার দিক দূর হবে। বৈষ্ণব ভাবচেতনায় যে নারী-আদর্শের উত্থান ঘটবে, তা পুরুষের চোখে নারীর প্রতি লোলুপভাবের অবসান ঘটিয়ে নারীর সনাতন “দেবীরূপের” উন্মোচন ঘটাবে। বাংলার প্রাণপুরুষ শ্রীমন্মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের কাছে এইই হোক প্রার্থনা।
তথ্যসূত্র:
১। চৈতন্যভাগবত: ঠাকুর বৃন্দাবন দাস
২। চৈতন্যচরিতামৃত : কবিরাজ কৃষ্ণদাস গোস্বামী
৩। ভক্তিরত্নাকর: নরহরি চক্রবর্তী ঠাকুর
৪। প্রেমবিলাস : নিত্যানন্দ দাস
৫। গৌরপার্ষদ চরিতাবলী: গৌড়ীয় মিশন, বাগবাজার
৬। গৌড়ীয় বৈষ্ণব জীবন : হরিদাস দাস
৭। গৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধান: হরিদাস দাস
৮। হরিভক্তিবিলাস : শ্রীগোপাল ভট্ট গোস্বামী
৯। সংস্কার দীপিকা: শ্রীগোপাল ভট্ট গোস্বামী
১০। The Position of Women in Hindu Civilization: Dr. A.S.Altekar
১১। Reconstructing Tradition Advaita Acharya and Gaudiya Vaishnavism at the cusp of the Twentieth Century: Rebecca J Manring
১২। শ্রীক্ষেত্র: সুন্দরানন্দ বিদ্যাবিনোদ