
ভালোবেসে সংসার করা- মিনাক্ষী মন্ডল
সমাজে যে যার অবস্থান থেকে এক জন আরেক জনকে ঠকিয়ে চলেছে, ঠকছি সবাই। তবুও আমরা থেমে থাকি না বা নিজের করণীয় সম্পর্কে সাবধানতা অবলম্বন করি না যে কি করা উচিত আর কি করা উচিত না।অথচ চোর পালালে বুদ্ধি বের হয় সকলের।কিছুদিন আগে এমনই একটা ঘটনা ঘটে গেল মনীষার জীবনে ।মনীষা হচ্ছে রায় বাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ। সুন্দরী, শিক্ষিতা, বুদ্ধিমতী মনীষার এই রায় বাড়িতে বউ হয়ে আসা পনেরো বছর হয়ে গেছে এরই মাঝে শ্বশুর-শাশুড়ি গত হয়েছেন। সংসারের যাবতীয় কাজ মনীষা নিজের হাতে করে এরজন্য স্বামীর কাছে বাহবাও পায় খুব তাছাড়া সংসারে তার কথার দাম সকলেই দেয়।মনীষা নিজেও এতদিন ভালোবেসে শুধু সংসারই করে গেছে।হঠাৎ একদিন মনীষার বান্ধবীর ফোন এলো, সে জানালো ,’ অফিসের কাজে সে দু’দিনের জন্য কলকাতা আসছে, এই দু’দিন সে মনীষার বাড়িতেই থাকবে’ , খুব ভালো কথা ! মনীষার ও খুব আনন্দ হচ্ছে অনেকদিন পর বান্ধবী কে দেখবে।যথাসময়ে মনীষার বান্ধবী বাড়িতে এলো, মনীষা লক্ষ্য করছে, তার বান্ধবী সোমার জীবনধারায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে, নিজে রোজগার করে, জীবনের স্বাধীনতাও অনেক, এই স্বাধীনতায় অন্যরকম সুখ। মনীষার বাড়ি থেকে আজ সোমা চলে গেল কিন্তু সোমার একটা কথা মনীষার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে… ‘সারাটা জীবন সংসার সংসার করেই কাটিয়ে দিবি ? জীবনে আর অন্য কিছুর আকাঙ্ক্ষা নেই তোর’ ?
সোমা যাবার পর, সোমার বলা কথা তার স্বামীকে মনীষা জানায়। আজকাল মনীষা মাঝে মাঝেই তার স্বামীকে শোনায়, ‘এই সংসারের জন্য আমি আমার যোগ্যতা কে কোথাও কাজে লাগাতে পারিনি।’তারপরে একদিন মনীষা হঠাৎ মোবাইলে বিজ্ঞাপন দেখে,’ সিরিয়াল বা ছবিতে অভিনেতা অভিনেত্রী প্রয়োজন ,যদি কেউ ইচ্ছুক যোগাযোগ করতে পারে এই…. নম্বরে’।মনীষা ছোটবেলায় অনেক নাটক করেছে স্কুলে ,পাড়ার স্টেজে।অনলাইনে তাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং তারা সেখানে মনীষাকে আড়াই হাজার টাকা সহ কিছু ডকুমেন্টস নিয়ে অফিসে যোগাযোগ করতে বলে । মনীষা তার স্বামীকে জানালে তার স্বামী কোন আপত্তি করে না বা করতে চায়নি সংসারের শান্তি বজায় রাখতে বরং সেদিন মনীষার স্বামী মনীষা কে সঙ্গে করে সেই ফিল্ম প্রোডাকশনে এর অফিসে নিয়ে যায়, সেখানকার হাবভাবে মনীষার স্বামী বুঝতে পেরেছিল যে এটা একটা লোক ঠকানো প্রতারণার চক্র মাত্র তবুও কোন কথা না বলে স্ত্রী যাতে নিজের ভুল বুঝতে পারে তার জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে তাদের কথার জালে পা দিয়ে ট্রেনিং মারফত আড়াই হাজার টাকা দিয়ে আসে।সেই অফিস থেকে জানানো হয় তিন মাস পর্যন্ত সপ্তাহে একদিন ট্রেনিং দেওয়া হবে।পরের সপ্তাহে আবার মনীষার স্বামী মনীষাকে নিয়ে সেই অফিসে গেলে দেখে এত বড় তালা ঝুলছে, নম্বর অনুযায়ী ফোন করলে not reachable বলে।তারপর একদিন তাঁরা মনীষার নম্বর ব্লক দেয়।মনীষা সেই কাজের আশা ছেড়ে দিয়ে, স্বামীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে কোনদিন আর কোন কাজের চেষ্টা সে করবে না , সে জীবনে যা পেয়েছে সেটা নিয়ে সুখে থাকতে চায়।মনীষা স্বামী বলেন, ‘ওটা যে একটা প্রতারণা চক্র সেটা তুমি যে বুঝতে পারবে আমি জানতাম। তাই সেদিন আমি বুঝতে পেরেও তাদের আড়াই হাজার টাকা দিয়ে এসেছিলাম’। কথাটা শুনে মনীষার আরো রাগ হয়, সে বলে, ‘জেনে বুঝে এতোগুলো টাকা দিয়ে এলে’?মনীষার স্বামী বলে, “তোমাকে বোঝানোর জন্য এই মূল্যটা খুব কম এবং আরো বলে, তোমার বান্ধবীকে বলবে, সৎ পথে, ভালোবেসে করা কোন কাজ ছোট নয়”।মনীষা কাজের সন্ধানের গোঁয়ার্তুমিকে বিসর্জন দিয়ে আগের মতই ভালোবেসে সংসারে মন দিল,সেটাই তার বর্তমানে উপযুক্ত কাজ।এই সংসারটাও সুন্দর করে অনেকেই করতে পারেনা যেটা মনীষা পারে।
।। সমাপ্ত।।