আধুনিকতার সাথে প্রাচীনত্বের সহাবস্থান - জয়দীপ গোস্বামী


সময় যখন বহমান আর জীবনের এই গতিতে সময় তারা পাতায় অনেক কথা লিপিবদ্ধ করে রেখেছে আর সেই লেখা গুলোর ওপর ভর করেই আমাদের আগামী দিনের সময় অতিবাহিত হয়। আর সেই স্মৃতিগুলোও কালের মহিমাতে অনেকই তাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে। আর এই অবক্ষয়ের আরও একটা প্রধান কারণ হলো নব প্রজন্মের আধুনিকতার কাছে এই সব প্রাচীনতার গুরুত্ব অনেক কমে গেছে। আধুনকিতা সাথে স্বমহিমায় এঁটে ওঠার ক্ষমতা হারায়নি আধুনিক মনষ্ক মানুষের মনুষত্বের কারণে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অক্ষম হয়ে পড়ছে। ওই সব পুরোনো স্থাপত্য, শিল্প, কলা, প্রাচীন চিত্রকলা নিয়ে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করি। আমাদের এই সভ্যতা অতিপ্রাচীন সভ্যতা তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তাই প্রাচীন ভারতীয় এইসব কলাকার দের নির্মিত কলাকৌশল আজও আমাদের মুগ্ধ করে। আমরা প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার বিবরণ হিসেবে যেই গুলোর ওপর নির্ভর করি তাদের মধ্যে অন্যতম নির্দশন হলো মন্দির, রাজবাড়ী, দূর্গ, নাটমন্দির, মূল মন্দির প্রভৃতি। আবার এই সব মন্দির গুলোর গঠন প্রনালীর-ও নানা প্রভেদ লক্ষ্য করা যায়। যদি আমরা যদি মন্দির গুলির গঠন প্রনালী নিয়ে পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো যে আমাদের এই উপমহাদেশের মন্দিরগুলির কোনোটির গঠন রথের মতো আবার কোনোটি ঘরের মতো আবার কোনোটি একচালা, দুচালা বিশিষ্ট আবার কোনোটি আটচালা বিশিষ্ট, কোনো মন্দিরের চুড়া একটি আবার কোনো মন্দিরের চুড়া অনেক। এই সব গঠন আর বৈচিত্র ভারতকে আরও সাজিয়ে তুলেছে। প্রাচীন কালের ওই সব মন্দির গুলির নির্মান পদ্ধতি নিয়েও অনেক মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। অনেক স্থপতির মতে আগেকার দিনে মন্দির গুলো নির্মানের জন্য প্রধান গুরুত্ব দেওয়া হতো বাস্তু, জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্র, রাজারাজড়া বংশতালিকা প্রভৃতির ওপর নির্ভর করে নির্মিত হতো। আমাদের শুধু না যেই দেশে সনাতন ধর্ম বা বহূইশ্বরিকতত্বের প্রচলন আছে সেই সব দেশেই এই মন্দির গুলি দেখা যায়। মন্দির গুলি বিভিন্ন দেবদেবীর হতে পারে। মন্দিরের আকার আকৃতি গঠন নিয়েও অনেক প্রভেব লক্ষ্য করা যায়। যেমন, কোনো কোনো মন্দিরের আকার বড়ো আবার কোনো মন্দিরের গড়ন ছোট। আমাদের এই প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় বেশিরভাগ মন্দির কোনোনা কোনো রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয়েছে। এবং সময়ের সাথে রাজার রাজত্ব আর রাজত্বের পরিবর্তনের সাথে সাথে মন্দির নির্মানকৌশল আর মুর্তি নির্মান প্রনালীর পরিবর্তন হয়েছে। যদি এই ধারণা মিথ্যে হতো তাহলে সব মন্দিরের ধরণ একইরকম হতো তা তো হয়নি। এছাড়া প্রাচীন কালে তো আর সময় নির্ধারণ করার জন্য আধুনিক ক্যালেন্ডার ছিল না তাই তখনকার স্থপতি রা সময় নির্ধারণ করার জন্য গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান এর ওপর ভিত্তি করে মন্দির শুরুর আর শেষ এর দিনসংখ্যার নির্ধারণ করতো, সময় নির্ধারণ করার জন্য সূর্যদয় থেকে সূর্যাস্তের সময়কে নির্ধারণ করতো। আর সঠিক স্থান মন্দিরের গঠন আকার আকৃতি নির্ধারণ করার জন্যেও গ্রহনক্ষত্রের অবস্থান নির্নয় করে করতো। মন্দির নির্মানের ক্ষেত্রে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো বাস্তু শাস্ত্র। কারণ মন্দিরটি কোথায় নির্মান করা হবে তা বাস্তুশাস্ত্র-র মাধ্যমে নির্ধারণ করা হতো। কারণ বাস্তুর ওপর নির্ভর করত মন্দিরের গঠন কেমন হবে, সূর্যের চলাচল কেমন থাকবে, মাটির উপাদান গুলির পরিমাণ, মাটির গঠন প্রনালী, কোনমাটিতে নির্মান কার্য ভালো হবে, ওই বাস্তুতে চাষাবাদ করা হতো কিনা, মাটির উর্বরতা নির্ধারণ করা হতো। আর তখনকার দিনের রাজারা নিজের আত্মকির্তী সময়ের পাতায় লিখে রাখার জন্য অনেক মন্দির নির্মান করতেন, আর ওই মন্দির গুলিকে কেন্দ্র করে নানা জনবসতি, বাজার, লোকালয় গঠিত হতো। রাজারা বা নির্মাতারা মন্দিরকে কেন্দ্র করে নানা রাস্তার নির্মান করতেন যাতে দর্শনার্থীদের মন্দিরে আসতে অসুবিধা না হয়।


আমাদের ভারতে মূলত ২প্রকারের মন্দির নির্মান পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে, উত্তর ভারতীয় আর দক্ষিণ ভারতীয় পদ্ধতিতে। মন্দির গুলির সাধারণতঃ যে ধরণের নির্মান করা হয় তাতে মূলত একটা গর্ভগৃহ থাকে, যেখানে ভগবান অধিষ্ঠিত হন। যেখানে ঘড়ির ঘুর্ণনের দিকে ঘুরে ঘুরে প্রদক্ষিন করার প্রথা হয়ে আসছে। গর্ভগৃহের উপর শিখর আর শিখরে কলস। শিখরকে দক্ষিন ভারতে ভিমানা নামে পরিচিত। এই শিখরের গায়ে নানা পাথরের কারুকার্য করা হতো। মন্দিরের ভেতরে উত্তরণ নির্মান করা হতো। কোথাও মহাভারত রামায়ণের যুদ্ধের বর্ণনা, সমুদ্র মন্থনের ঘটনা, এছাড়াও যেই রাজা মন্দির নির্মান করছে সেই রাজার যুদ্ধের ছবি এখানে ব্যাবহৃত হতো। আবার চৈতন্য পরবর্তী তথা বিষ্ণু শিব কৃষ্ণ মন্দির গুলিতে চৈতন্যদেবের নাম সংকীর্তন প্রচারের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। ওখানে দেখা যায় নিমাই পণ্ডিত তাঁর পারিষদ সঙ্গ নিয়ে হরিনাম বিলি করছেন। তার থেকে আমরা তখনকার সময় সম্পর্কে জানতে পারি। এবার আসা যাক iconography বা মুর্তি নির্মান পদ্ধতির ব্যাপারে। প্রাচীন দেবদেবীর মুর্তি আরও খোলসা করে বলতে হলে বলতে হয় পাথরের বিগ্রহ গুলির নির্মানপ্রনালীর মধ্যেও অনেক রহস্য আছে। অনুমান করা যায় যে, এই সব মুর্তি গুলোর নির্মান প্রনালীও সময় রাজা অঞ্চলভেদে পরিবর্তন হয়ে থাকে। উধারণ স্বরূপ বলা যায় যে প্রাচীন কালে যেই সব কালী মন্দির নির্মিত হয়েছে তাদের প্রত্যেকের গঠন প্রনালী আলাদা। আবার প্রচলিত ধারা সাবেকি পূজো গুলিরও যে মুর্তি প্রস্তুত করা হয় সেই গুলির মধ্যেও বিচিত্রতা পরিলক্ষিত হয়। আবার অনেক বংশের বংশ পরম্পরায় একই ধারায় মুর্তি নির্মান করার ধারা প্রচলিত রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে সাবর্ণ রায় চৌধুরি বাড়ির কালী পুজোতে যবে থেকে পুজোর প্রচলন শুরু হয়েছে তবে থেকে একই ধরণের ধারা অব্যাহত রাখা হয়েছে। আবার আসা যাক মন্দির গুলির গঠন প্রনালী নিয়ে। এই সব স্থাপত্য মূলত Synthesis of arts, মানুষের ধার্মিক দিক, হিন্দু ধর্মে প্রভাব। আমাদের দেহ যেমন পঞ্চভূত দ্বারা নির্মির হয়েছে তেমনই মন্দির গুলিও এই পঞ্চভূত দ্বারা নির্মিত হয়েছে তেমনই মন্দির গুলিও ওই পঞ্চভূতের প্রতীক। বার প্রচলিত যে মন্দির গুলিতে অর্থ কাম দূরিভুত হয় আর মোক্ষপ্রাপ্ত ঘটে। প্রাচীন কালে এই স্থাপত্য নির্মান কেন্দ্রিক অনেক গ্রন্থ রচিত হতো সেই গুলি শিল্প শাস্ত্র নামে পরিচিত। হিন্দু সংস্কৃতি তে শিল্পিদের উৎসাহিত করা হতো মন্দির নির্মান আর নিত্যনতুন কারুকাজ নির্মান করার জন্য, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই তথ্য বিকৃত হয়েছে। কারণ যে যে শিল্পি এই মন্দির স্থাপত্য, ভাস্কর্য নির্মান করতো কর্তৃপক্ষ তাদেরওপর নানা জুলুম চালাতো পারিশ্রমিক দিতোনা।






মন্দির গুলি সর্বদা সম্পদে পরিপূর্ণ থাকতো। এখানে সম্পদ বলতে হীরে মানিক ধণ দৌলত মণী মাণিক্য এই ছাড়াও সমৃদ্ধ ছিল নানা কারুকার্যের জন্য। মন্দির গুলিতে বেশি নৃত্য ভঙ্গিমায় নারী মুর্তী খোদাই করা হতো। নর্তক নর্তকী দের ছিত্র, দেবী দেবতার ছবি খোদাই করা হতো। আবার সেখানে রাজার দানশীলতা চিত্র অঙ্কিত করা হতো। আবার রাজার বীরত্বের প্রতীকী হিসেবে যুদ্ধাভিজান, রাজার মৃগয়ার চিত্র খোদাই করা হতো ছেনি হাতুড়ির সাহায্যে। এই মন্দির গুলোতে অনেক চিত্র অঙ্কিত হতো। জীবনের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ন অনেক বিষয়ই ফুটে উঠেছে। মন্দির নির্মানের সময় দেশ বিদেশের বহূ চিত্রকর কে এনে মন্দিরে চিত্র খোদাই করা হতো। আবার যেই দেবতার মন্দির সেই দেবতার ও নানা কর্মকাণ্ড ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই গুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো প্রজারা রাজার বিদ্রোহী না হয়ে ওঠে এর জন্যেই অনেক মন্দির নির্মান করা হতো। যদি Time table অনুযায়ী বিচার করব যায় তাহলে দেখা যাবে ১৫০০ খ্রীস্টাব্দের আগে বাংলা জুড়ে যেহারে শিব আর শক্তির আরাধনা করা হতো তখন বৈষ্ণব উপাসনার প্রসার সেই ভাবে ঘটেনি । শ্রী চৈতন্যদেবের ভক্তি আন্দোলনের পর থেকে বাংলায় এই বৈষ্ণব উপাসনার প্রসার ঘটে। তাই মন্দির গুলিতেও এই বিশেষ পার্থক্য গুলি লক্ষ্য করা যায়। তার থেকেও বিভিন্ন রাজা রাজড়ার সময়কাল পরিবর্তনেরব ছাপ লক্ষ্য করা যায়। এই রকমই একটা কলা লক্ষ্য করা যায় বিষ্ণুপুরের মন্দির গুলিতে। ওই মন্দির গুলিতে মাটির ওপর অঙ্কিত বিভিন্ন কারুকার্য খোদাই করা হতো ।একে টেরাকোটা বলে। এই টেরাকোটা শিল্পের জন্য বিষ্ণুপুর সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধ। ভারতের চিত্রাঙ্কন শিল্পটিও বহূ প্রাচীন। যখন মানুষের মনের বিকাশ ঘটতে শুরু করে, মানুষ যখন বুঝতে শুরু করে সেই সময় থেকেই মানুষ এই আঁকাআঁকি শুরু করে। তখন মানুষ গুহার গায়ে নানা ধরণের পশু পাখি মানুষের ছবি অঙ্কিত করতো এইভাবেই চিত্রকলার বিকাশ ঘটে এবং এর দ্বারাই বাকি সব সংস্কৃতি পরিব্যাপ্ত হয়েছে। এটু প্রাচীনকাল থেকে অবিরাম চলে আসা ও পর্যায়ক্রমিক বিরতির প্রতিনিধিত্ব করে। এবং চিত্রশিল্পের সাথে বাকি অন্য সব সংস্কৃতি অঙ্গাঙ্গিক ভাবে জড়িত। মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে মানব সভ্যতার আজ পর্যন্ত ধারার অন্যতম চালিকা শক্তি এই চিত্রকলা। বিংশ শতকের গোড়ার দিকে এই চিত্রশিল্প মূলত সমাজজীবন, প্রতিনিধিত্বমূলক, ধর্মবিশ্বাস তথা ধ্রপদীয় ধারার বাহক হিসেবে ছিল পরবর্তীকালে আরও বিশুদ্ধ বিমূর্ত এবং ধারণাগত পদ্ধতি প্রাধান্য পেয়েছিল। প্রাচ্যশিল্পকলার বিকাশকাল পাশ্চাত্য শিল্পকলার বিকাশকাল সমসাময়িক হলেও প্রাচ্য শিল্প অনেক প্রাচীন। আফ্রিকার শিল্প, ইহুদীয় শিল্প, ইশলামীয় শিল্প, ভারতীয় শিল্পকলা, চীনা শিল্প এবং জাপানি শিল্প প্রত্যেকেরই পশ্চিমা শিল্পের উপর তাৎপর্যপূর্ণ মিল লক্ষ্য করা যায়। প্রথমদিকে উপযোগী উদ্দেশ্যে এবং সাম্রাজ্যবাদী, বেসরকারি, সাধারণ নাগরিক এবং ধর্মিয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদর্শন করলেও, পূর্ব এবং পাশ্চাত্য চিত্রকলা পরে অভিজাত ও ধণী পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল। আধুনিক যুগ থেকে মধ্যযুগ ও পরে রেনেসাঁস সময়কালে চিত্রকরেরা চার্চ এবং ধণী অভিজাতদের জন্য কাজ করতো। রেনেসাঁস পরবর্তী যুগের সমাজচিন্তা জানার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো এই চিত্রকলা। চিত্রকরের দৃষ্টিভঙ্গি তার কাজের মধ্যে ফুটে উঠেছে। তখনকার চিত্রকররা মূলত সমাজকেন্দ্রিক চিত্র বেশি প্রতিফলিত করতো। আবার অনেক শাসক চিত্রকরদের দিয়ে নিজের প্রতিকৃতি অঙ্কন করাতেন। চিত্রকলার আদিকাল বলতে বোঝায় প্রাগৈতিহাসিক যুগে নিয়ান্ডারথালদের অঙ্কিত গুহাচিত্র, যার আনুমানিক বয়স ৪০০০০ বছর। ফ্রান্সের চৌভেট গুহায় পাওয়া ছবিগুলি প্রায় ৩২০০ বছর পুরোনো। ভারতের ভীমবাটিকা তে একইরকম গুহাচিত্রের প্রমান পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে এই চিত্রকলা দুটিভাগে বিভাজিত হয়েযায়, প্রাচ্যরীতি আর পাশ্চাত্যরীতি। প্রাচ্য চিত্রশিল্পের ইতিহাসে বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ধর্মের বিস্তৃত প্রভাব রয়েছে। প্রাচীন ভারতীয় শিল্পকলা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বহমান শৈল্পিক ঐতিহ্য। প্রথম দিকে এটি প্রতিনিধিত্বমূলক না হলেও আলঙ্কারিক ছিল। এই গুলিতে চিত্রের পরিবর্তে কারুকার্য নকশা র পরিমাণ ছিলো অনেক বেশি। প্রাথমিক মৃৎশিল্প গুলিতে সর্পিল, আঁকাবাঁকা সর্পিল, বিন্দু বা প্রাণী আঁকা ছিলো। যুদ্ধবাজ রাজ্য গুলির সময়কাল থেকে (অর্থ্যাৎ ৪০৩ থেকে ২২১ খ্রীস্টপূর্ব) শিল্পীরা তাদের চারপাশের বিশ্বকে উপস্থাপন করতে শুরু করে, যুদ্ধাভিজান রাজার প্রভাব আর প্রভাবে জর্জরিত প্রজাদের চিত্র অঙ্কিত করতো। খ্রীস্টপূর্ব ৬ঠ শতকের ছবি গুলো থেকে আমরা মগধের উত্থানের কথা জানতে পারি। খ্রীস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে অশোকের নানা সমাজ সংস্কারমূলক বৃত্তান্তের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। এই চিত্রগুলিই ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে জীবন্ত দলিল হিসেবে কাজ করে। প্রাচীন ভারতীয় এই চিত্রকলার অনেকগুলো ধারা প্রচলিত ছিলো। যাদের মধ্যে অতি প্রাচীনতম হলো মন্ডলা আর প্রাচ্য পাশ্চাত্যের মিলনে গড়ে ওঠা ডুডুল আর্ট। এছাড়াও আলপনাও অনেক পুরোনো সনাতন ধর্মের সূচনা থেকে কোনো শুভ কাজে আলপনা দেওয়ার প্রথা চলে আসছে। এক্ষেত্রে আলপনা শ্রীর প্রতীক। তাই প্রাচীন ভারতীয় এই সব শিল্পকলা সভ্যতার প্রতিটি বিষয়ে অন্তর্নিহিত। এছাড়াও উপজাতিরা তাদের গৃহসজ্জার খাতিরে একপ্রকার চিত্রশৈলী অঙ্কন করেন। যার ধারা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। প্রাচীন দক্ষিনভারতীয় মন্দির গুলিতে মন্ডলা চিত্রকলার দৃষ্টান্ত লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও রাজা বাদশাদের Portraits অঙ্কনেরও চল ছিলো। তাহলে অন্তিমে বলাই যায় যে প্রাচীন ভারতীয় সভত্যা যদি একটা বটবৃক্ষের হয় তাহলে স্থাপত্য, ভাষ্কর্য, শিল্পকলা, চিত্রশিল্প প্রত্যেকটা তার শাখাপ্রশাখা এবং ঐতিহ্য সংস্কার শৈল্পীকতা তার শিকড় যা আমাদের মানসিক চিন্তার অতিগভীরে প্রথিত অবস্থায় আছে। আর আমাদের এই সভ্যতা তার ছত্রছায়ায় নিজের জীবন অতিবাহিত করছি। আর বর্তমানেই আমরা এই বটবৃক্ষের ছায়া থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছি।