ভাড়াটে - অনিন্দ্য পাল
‘না, দেখ, না না, দুঃখিত, দেখুন’ – একটু আমতা আমতা করে কিছু একটা বলতে গেল বিশু। তাকে থামিয়ে দিয়ে বর্ষা বললো, ‘ আপনি আজ্ঞে ছেড়ে কথা বলুন, আমি কি আপনার, থুড়ি তোমার পিসি?’ বিশু বুঝলো এ বড়ো শক্ত ঠাঁই। এর সঙ্গে এঁটে ওঠার মত কলজের জোর তার নেই। তাই আবার শুরু করলো, ‘ না, দেখ এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ‘
ঝাঁঝিয়ে উঠে বর্ষা বলল, ‘ কেন? তুমি কি নপুংসক? না বৃহন্নলা! ‘
বিশুর মনে হল কেউ তার হৃৎপিণ্ডে একটা গরম গজাল ঢুকিয়ে দিল। রাগে আর লজ্জায় তার কান দুটো গরম হয়ে গেল। কোন মতে নিজেকে সামলে নিল বিশু। জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস নিয়ে একটু ধাতস্থ হয়ে বললো ‘ না, তা নয়, গ্রাজুয়েট হয়েছিলাম। চাকরি জুটলো না। ট্রেনে হকারি করি, অল্প যা উপার্জন করি তাতে মা আর আমার চলে যায় কোনমতে। এই উপার্জনে সংসার সামলাবো কী করে?
খাওয়াবো কী তোমাকে? ছেলেপুলের পড়াশুনা …’ আবার বিশুকে থামিয়ে দিল বর্ষা, ‘থাক, অতদূর না গেলেও চলবে, আর আমি তো তোমাকে টাটা বিড়লা মনে করে বলিনি, সব জেনেই বলেছি।’ একটু চুপ করে আবার শুরু করলো বর্ষা, ‘বাবার বয়স হয়েছে, প্রস্টেটের ক্যান্সার ধরা পড়েছে, কবে আছে কবে নেই, তোমরা ভাড়া আসার পর থেকে বাবা তোমার সম্পর্কে সব খোঁজ খবর নিয়ে আমাকে বারবার পীড়াপীড়ি করছে, কী করি বলোতো? তার চিন্তা, মরে গেলে আমাকে শিয়াল কুকুরে ছিঁড়ে খাবে। অনেক সম্বন্ধ আসছে, বাবার পছন্দ নয়, সবাই নাকি সম্পত্তির লোভে আসছে।’ এবার বর্ষার গলায় একটা অসহায় আর্তি ফুটে উঠলো, সঙ্গে সঙ্গেই সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, ‘ আমি কোনসা আপনার প্রেমে পড়েছি মশাই? আর না আমার বিয়ে নিয়ে রাতে ঘুম হচ্ছে না? শুধু ওই মানুষটার জন্য একটা মেয়ে হয়েও …যাকগে আমি এখন যাই, বাবার রাতের খাবার দিতে হবে।’
প্লাস্টিকের চেয়ারটা ছেড়ে উঠে পড়লো বর্ষা। দরজা দিয়ে বাইরে বেরোচ্ছে, তখনই বিশু বলে উঠলো ‘ তাহলে সামনের মাস থেকে আর বাড়ি ভাড়াটা দিচ্ছি না। যে কটা টাকা বাঁচে, পরে কাজে লাগবে …!’
একটা লজ্জা মেশানো স্বস্তির চাউনি চোখ বাঁকিয়ে বিশুর মুখের উপর আছড়ে ফেলে ছুটে চলে গেল বর্ষা।
ভাঙাচোরা চৌকিটার উপর সমস্ত শরীর মন এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো বিশু। তার বুকের গোপন গভীর থেকে একটা স্বস্তির লুকোনো নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল।
মন্টু পৈলান কে খবরটা দিতে হবে, গত ছমাস ধরে ছকটা তো সেই কষেছিল, বুড়োর কানে বিশুর নামে সব গুণকীর্তন তো তারই তৈরি প্লট।
‘চুক-চুক-চুক’ একটা শব্দ বেরিয়ে এল বিশুর মুখ থেকে, ঠোঁটে একটা বাঁকা হাসি।
Bio:
জন্ম ১৯৭৮ সালে, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার চম্পাহাটিতে। বাবা পরলোকগত বিশ্বনাথ পাল। মাতা অনিতা পাল। পদার্থবিদ্যায় সাম্মানিক স্নাতক, বি এড। তাড়দহ হাইস্কুলের শিক্ষক। লেখা শুরু কলেজের দিনগুলোয় যদিও প্রকাশ অনেক পরে। দেশ, কৃত্তিবাস, আনন্দমেলা, প্রসাদ, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান, বিজ্ঞানভাষ, তথ্যকেন্দ্র, নিউজ বাংলা, উৎসব, অপদার্থের আদ্যক্ষর, শ্রমণ, ব-দ্বীপ বার্তা, কল্পবিশ্ব, অনুবাদ পত্রিকা, প্রভৃতি অনেক পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
“সুখবর” পত্রিকায় শতাধিক বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়ে প্রবন্ধ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
“তোর মত হলে অন্ধকারকেও ভালোবাসি”, “জলরঙের ওড়না ” ও “সমুদ্রে রেখেছি সময়” ও ” আমি এসেছিলাম ” নামে চারটি কাব্যগ্রন্থ আছে।
“ছোট্ট সবুজ মানুষ” প্রকাশিত প্রথম বিজ্ঞান প্রবন্ধের বই।
সাপলুডো নামে একটা পত্রিকার সম্পাদনা করেন।
Tags: The Indian Rover