• Facebook
  • Instagram
  • Twitter
Tuesday, December 27, 2022
  • Login
  • Home
  • Archives
    • Archives
    • The Indian Rover ( Issue: December, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: October, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: June, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: March, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: December, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: November, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: October, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: September, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: August, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: July, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: June, 2021)​
    • The Indian Rover (Issue: May, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: April, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: March, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: Feb, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: Jan, 2021)
  • Categories
    • Finance
    • Science
    • Sports
    • Non Fiction
  • About
  • Contact Us
  • Submit Guest Post
    • Login
    • Account
    • Dashboard
  • Announcement
No Result
View All Result
The Indian Rover
Advertisement
  • Home
  • Archives
    • Archives
    • The Indian Rover ( Issue: December, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: October, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: June, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: March, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: December, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: November, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: October, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: September, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: August, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: July, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: June, 2021)​
    • The Indian Rover (Issue: May, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: April, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: March, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: Feb, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: Jan, 2021)
  • Categories
    • Finance
    • Science
    • Sports
    • Non Fiction
  • About
  • Contact Us
  • Submit Guest Post
    • Login
    • Account
    • Dashboard
  • Announcement
No Result
View All Result
The Indian Rover
No Result
View All Result
Home Magazine

যোগ সাধনা

Tirtha by Tirtha
June 19, 2021
in Magazine, Non Fiction
0
0
SHARES
308
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

The Indian Rover (Issue: May, 2021)

যোগ সাধনা - জয়দীপ গোস্বামী

যোগ শব্দের সাধারণ অর্থ হলো “যুক্ত করা”। গাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যোগ শব্দের অর্থ হলো দুটি সংখ্যাকে একত্রে যুক্ত করে সংখ্যার মান বৃদ্ধি করার পক্রিয়া। যথা ❝১+১=২❞। এক্ষেত্রে “১” সংখ্যার থেকে এদের দুটির যোগ ফলের মান বেশি।  যোগ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত “ যুজ ” ধাতু থেকে। যার অর্থ  “ নিয়ন্ত্রণ করা ”, যুক্তকরা বা ঐক্যবদ্ধ করা। সম্ভবত সংস্কৃত শব্দ ❝ যুজির্সমাধৌ ❞ শব্দটি থেকে যোগ শব্দটি এসেছে। যার অর্থ চিন্তন বা সম্মিলন। যোগ শাস্ত্রের অন্যতম শাখা দ্বৈতবাদী রাজযোগের ক্ষেত্রে এই অনুবাদটি যথাযত। কারণ রাজযোগে নিহিত রয়েছে চিন্তনের মাধ্যমে প্রকৃতি ও পুরুষের মধ্যে ভেদজ্ঞানের জন্মলাভ।  আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে যোগ শব্দের অর্থ হলো জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন সাধনের এক উপায়। এই যোগ সাধনের ফলে মানুষ তাদের পার্থিব চিন্তা ধারা থেকে মুক্তি লাভ করে ইশ্বরের চিন্তায় মনোনিবেশ করতে পারে। নিজের অন্তরের কলুষিত পদার্থ গুলিকে দুরিভূত করে মনকে স্বচ্ছ করার মাধ্যম যোগ। যোগ সাধনার ক্ষেত্রে একটি প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে যে, খালি পেটে যোগ সাধনা হয়া না। হ্যাঁ এই কথা সত্য যে যোগ সাধনা পরিমিত আহার বা খালি পেটেই করতে হয়। কিন্তু এই Theory টাও অবান্তর নয় যে খালি পেটে যোগ সাধনা হয় না। মানুষ যেই পর্বে গুহাতে বসবাস করতো সেই পর্বে তাদের প্রধান ধর্ম ছিলো খাদ্য সংগ্রহ করে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। সেই খাদ্য সংগ্রহ করাই ছিল তাদের কাছে ইশ্বর সাধনা করার থেকেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের মাথায় যোগ সাধনা করার মানসিকতা জাগরিত হয়নি। মানুষ সেই পরিস্থিতিতেই যোগ সাধনা করার কথা চিন্তা করে যখন তাদের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের সুবন্দোবস্ত চিলো। বেঁচে থাকার সমস্ত প্রকার রসদ তাদের ছিলো তার পরেই তারা ইশ্বর চিন্তা, যোগ সাধনা, বিশ্ব কে আয়ত্ব করতে মনোনিবেশ করে।  তার পর থেকেই যোগের চিন্তাধারা মানুষের মনে যোগ চিন্তার উন্মেষ ঘটতে থাকে। এই পর্বের সূচনা হয় বৈদিক যুগে। যোগ চর্চার ক্রমধারাবাহিক সূচি ঃ যোগ শব্দটির সঙ্গে ভারত অতি প্রাচিন কাল থেকেই সম্পর্ক যুক্ত। যোগ হলো একপ্রকার ঐতিহ্যবাহী, শারীরবৃত্তীয় ও মানসিক সাধন প্রনালী যা সাধনে মানসিক শান্তি লাভিত হয়। মানুষের মনের কলুষতাকে দূরিভুত করে মনকে স্ফটিকের ন্যায় স্বচ্ছ করার পক্রিয়া।  হিন্দুধর্মে অনেক প্রাচিন কাল থেকেই যোগ সাধনার উল্লেখ আছে। সনাতন দর্শনের প্রধান ৬টি শাখার অন্যতম এই যোগ দর্শন। হিন্দু শাস্ত্রে প্রচলিত আছে যে ভগবান পিনাকপাণি প্রাধান ৭টি ঋষিকে এই যোগের জ্ঞান দেন। এই সপ্ত ঋষি ব্রহ্মান্ডে যোগ সাধনার প্রচার করেন। একমাত্র ভারতেই যোগ সাধনা ব্যপক আকারে দেখা পালিত হয়েছিল   । যার প্রমাণ আমরা এখনও ধর্মগ্রন্থ গুলিতে লাভ করি। সনাতন ধর্মের সব থেকে প্রাচিন গ্রন্থ হলো বেদ। বেদ যে ঠিক কবে লেখা হয়েছিল তানিয়েও গবেষকদের মধ্যে মতপার্থক্যের অন্ত নেই। আমরা সবাই জানি বেদ প্রথমে শ্রবণের মাধ্যমে মনে রাখা হতো লেখার প্রচলন ছিলো। গুরুকূল গুলিতে এই সমস্ত শ্লোক গুলি গুরুর মাধ্যমে শিষ্যদের কাছে প্রচারিত হতো। এবং শিষ্যরাও তা মনে রাখতো। এই ধারা একপ্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মের স্থানান্তরিত হতো। তাই বেদের সঠিক রচনা কাল অনুধাবন করা দূরহ ব্যাপার। বেদে আমরা যোগ এর উল্লেখ পাই। তাই যোগ সাধনার উৎপত্তি সঠিক করে বলা সম্ভব নয়। প্রাচিন ধর্ম গ্রন্থ বেদের প্রধান চারটি ভাগ। যথা-  ঋগবেদ, সামবেদ, যর্জুবেদ, অথর্ববেদ । ঋগবেদ সবথেকে প্রাচিন। এই বেদে আমরা যোগের উল্লেখ পাই। অর্থাৎ যতদিন এই বিশ্বে ঋগবেদ এর অস্তিত্ব আছে ততোদিন যোগ বর্তমান। বেদ আবার ৪টি ভাগেও ভাগ করা যায়। যথা মন্ত্র বা সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ।  তবে আধুনিক ঐতিহাসিক দের মতে বেদের রচনা কাল হিসেবে ধরা হয় ১৫০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ থেকে ১০০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ এর মধ্যে। বেদ কে কেন্দ্র করে পরবর্তি কালে অনেক টীক টিপ্পুনি, গ্রন্থ রচিত হয়েছে। টীকাকার, গবেষকদের মতে বেদে এমন কয়েকটি শ্লোক পাওয়া গেছে যার আয়ু প্রায় ১০,০০০ বছর। সবথেকে প্রাচিন যে বেদের খণ্ড পাওয়া গেছে তা প্রায় ৭৫০০ বছর পুরোনো। বেদ হলো একটি সংগ্রহ যেখানে অন্তর্নিহিত রয়েছে ধরিত্রীর নানা গুঢ় তত্ত্ব, কৃষিবিজ্ঞান, গাণিতিক সুত্র, সামাজিক জ্ঞান বিজ্ঞান, আয়ুর্বেদ শাস্ত্র, নানা শিল্প, কলা, গান, নৃত্যশৈলী ইত্যাদি। সামবেদের শ্লোক, স্তব, স্তুতি গুলি পরবর্তী কালে নানা ভক্তিগীতি রূপে প্রচারিত হয়।  বেদের এই উপনিষদে স্পষ্ট ভাবে যোগ এর উল্লেখ পাওয়া যায়। মানবিক চিন্তা প্রত্যাহার করার ধারণা, মনকে সংযত করার ধারণা আমরা উপনিষদের মধ্যে দেখতে পাই। যোগের মাধ্যমে পরিমোক্ষ লাভের পন্থাই হলো যোগের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় । বৈদিক পর্বেই মানুষ যোগ সাধনা করতো তার প্রমান মেলে তখনকার সাধূ সন্নাসীদের দেখে। ওনারা যে তপস্যা করতেন সেটাই যোগ। তাই বেদের সাথে যোগ সাধনা অঙ্গাঙ্গিক ভাবে জড়িত। রামায়ণ পর্বে যোগ সাধনা ঃ যোগ পৃথিবীতে ঠিক ততোদিন বর্তমান, যতোদিন মানুষ ইশ্বরের আরাধনা করা শুরু করেছে। আর সেই সময় থেকেই যোগের অভ্যাস প্রতি যুগে যুগে চলে আসছে। যদি আমরা রামায়ণ কে নিছক কল্পকাহিনির আখ্যা না দিয়ে থাকি তাহলে ওই রামায়ণে বর্ণিত যোগ সত্য।  আজথেকে প্রায় ৭০০০ বছর আগে এই ভারতের রঙ্গমঞ্চে অভিনিত হয়েছিলো সত্যিকারের রামায়ণ। যেখানে স্বয়ং রাম এই ধরাধামে অবতির্ণ হয়েছিলেন। আধুনিক গবেষকের মতে ১৫০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে রামায়ণ রচিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে যে সমস্ত নির্দশন আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলো রাময়ণের সময়কাল প্রায় ৭৫০০ বছর পুরোনো কে নির্দেশ করছে।  রামায়ণের সঙ্গে যোগ অঙ্গাঙ্গিক ভাবে জড়িত। রামায়ণের প্রায় ২৪০০০ শ্লোকে অযোধ্যার রাজা পুরুষোত্তম রামের উল্লেখ পাওয়া যায়, যাঁর জীবন সুখকর ছিলো না। তাঁর জীবন অতিবাহিত হয়েছে নিরলস পরিশ্রম এবং অসহনীয় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেগুলিকে তিনি তাঁর রাজকীয় দৃঢ়তা এবং মানসিক সংযমের মাধ্যমে জয় করেছিলেন যা যোগ চর্চার প্রধান অঙ্গ কে নির্দেশ করে। তিনি তার সারা জীবন ধরে নিজের কর্তব্যের পালন করে গেছেন। তিনি তার কর্তব্যপরায়ণতা থেকে বিচলিত হননি। ওনাকে ভারতের শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ যোগী। শুধু তাই নয় আমরা রামায়ণ যুড়ে দেখতে পাই সীতার প্রেম, ভ্রাতার লক্ষণের আনুগত্য, হনুমানের প্রভুর প্রতি স্নেহ। এই সব গুলি সেইসময়কার যোগ চর্চার পরিচায়ক। যোগ হলো এমন এক জিনিস যা মানুষের মধ্যেকার সমস্ত প্রকার কলূষতা কে দূরিভুত করে মানুষের মনকে সংযত রাখে। যোগ কার্যনির্বাহ এবং দায়িত্ববোধ জাগরণের মহরত গড়ে তোলে। মানুষকে মানসিক সংযমের সহিত জীবন পালন, মানুষকে নিঃস্বার্থ জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করে। এটাই যোগ সাধনার প্রকৃত সংজ্ঞা।মহাভারত পর্বে যোগ সাধনা ঃ  মহাভারতের সঙ্গে যোগ সাধনার অতি নিবিড় সম্পর্ক। ভারতের সবথেকে বৃহৎ মহাকাব্য মহাভারতে আমরা নানা প্রকার যোগ এবং যোগীর বর্ননা পাই। মহাভারতে স্থান লাভ করেছে বিভিন্ন প্রকার যোগী, সিদ্ধি ব্যাক্তিদের যোগ সাধনা , জীবনি, তাদের যোগ শিক্ষার পক্রিয়া, যোগ প্রাপ্তির মার্গ, যোগ সাধনের কঠোর নিয়ম নিষ্ঠা, যোগীর প্রকারভেদ যোগ সাধনের ফলে যোগীর সিদ্ধিলাভের বর্ণনা, যোগের মাধ্যমে আত্মসাক্ষাৎকার, মোক্ষপ্রাপ্তি, যোগীদের মৃত্যু বর্ণনা, ভগবান বিষ্ণু দ্বারা নির্মিত মায়াযোগের বর্ননা পাওয়া যায়। যোগের দ্বারা কিভাবে জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলনের প্রমান মেলে এই গ্রন্থে।  মহাভারতের প্রতিটি ছন্দে যোগের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। মহাভারতের চরিত্র গুলোর মধ্যেও যোগসাধনা, মনন, চিন্তনের প্রমান পাওয়া পাওয়া যায়। মহাভারতে আমরা এমন কতোগুলো যোগীর উল্লেখ পাই যাদের যোগ সাধনা এখনও প্রভাবিত করে৷ এই মহাভারতের সময়েই আবির্ভূত হয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ যোগী আর নেই। তিনি তার জীবন যুড়ে লিলা করে গেছেন কখনও অষ্টসখী সমাবিষ্ট হয়ে আবার কখনো গাভীদের সঙ্গে। তিনি মহাভারতের যুদ্ধের পূর্বে যুদ্ধে উদাসীন অর্জুনকে যুদ্ধে মনোনিবেশ করানোর জন্য তিনি অর্জুনকে নীতিশিক্ষা দিয়েছিলেন যা শ্রীমদ্ভাগবত গীতা নামে পরিচিত।  গীতা একটা যোগ সাধনার গ্রন্থ। যেখানে তিনি অর্জুন কে জীবনের গুড় রহস্য গুলির সঙ্গে অবগত করিয়েছিলেন। গীতার অধ্যায় গুলিতেও যোগ এর উল্লেখ পাওয়া যায়। গীতার মোট শ্লোক সংখ্যা ৭০০ তাই গীতাকে সপ্তসতী গ্রন্থও বলা হয়। এই পর্বে তিনি অর্জুনের মনের জড়তা তে দূরিভুত করেছিলেন। গীতার অধ্যায় গুলো হলো নিম্নরূপ — অর্জুন বিষাদ যোগ  সাংখ্য যোগ  কর্ম যোগ  জ্ঞান যোগ  কর্ম সন্যাস যোগ  ধ্যান যোগ  বিজ্ঞান যোগ  অক্ষর ব্রহ্ম যোগ  রাজগুহ্য যোগ  বিভূতি যোগ  বিশ্বরূপ দর্শন যোগ  ভক্তিযোগ  প্রকৃতি পুরুষ যোগ  গুণত্রয় বিভাগ যোগ  পুরুষোত্তম যোগ  দৈবাসুর-বিভাগ যোগ শুদ্ধাত্রয় বিভাগ যোগ  মোক্ষ যোগ  ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেহের সাথে মানসিক চিন্তার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য যোগের জ্ঞান দিয়েছিলেন। উনি যে পরিস্থিতিতে এই বাণী দিয়েছিলেন সেই সময়ের প্রেক্ষাপট বিচার করলে দেখা যাবে যে, মহাভারতের যুদ্ধে প্রতিপক্ষ নিজের পিতামহ, শিক্ষাগুরু, ভ্রাতা, পরিবার কে দেখে যখন অর্জুন যুদ্ধ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেই সময় তিনি অর্জুনকে নিজের মনকে দৃঢ় করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করানোর জন্য যোগ এর জ্ঞান দিয়েছিলেন। তিনি অর্জুনের মানসিক অবিচলিত মনকে শান্ত করার জন্য তিনি সংসারের সব রহস্যের সাথে অবগত করিয়েছিলেন। এর ফলে অর্জুন যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয় এবং ধর্মস্থাপনার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। হরপ্পা সভ্যতাতে যোগ সাধনা ঃ যোগ, যার উল্লেখ আমরা বেদ, সনাতন ধর্মগ্রন্থ, মুনি ঋষিদের উপাখ্যান, শাস্ত্র, রাময়ণ, মহাভারতের মতো প্রাচিন গ্রন্থ গুলোতে পেয়েছি। এই সব গ্রন্থের রচনাকাল নিয়ে অনেক মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই পর্বে প্রাপ্ত নিদর্শন গুলো কতোটা পুরোনো তা নিয়ে বিভেদের অন্ত নেই। কিন্তু আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর পুর্বে সিন্ধু ও তার অববাহিকা অঞ্চল জুড়ে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সেই সভত্যাতে খনন কার্যের ফলে অনেক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছিলো তাদের মধ্যে যোগ সাধনার উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রায় ২৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে হরপ্পা সভ্যতার সূচনা হয়েছিলো, ভারতের প্রথম শহরকেন্দ্রিক সভ্যতা গুলির মধ্যে অন্যতম, ১৯২১-২২ সালে রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় এবং দয়ারাম সাহানি হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারোতে খনন কার্য চালিয়ে এই সভ্যতা আবিষ্কার করেন। সিন্ধু সভ্যতার বেশিরভাগ নিদর্শন হরপ্পা থেকে আবিষ্কার হয়েছিলো বলে এই সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা বলা হয়। এই সভ্যতায় খনন কার্যের ফলে এমন কিছু কিছু পুরাবস্তু আবিষ্কৃত হয়েছে যা সেই সময়কার যোগ সাধনা কে নির্দেশ করে। ওই সভ্যতায় এমন কিছু সিলমোহর পাওয়া গেছে যেগুলি স্পষ্ট ভাবে ইঙ্গিত করে যে সেই সময় যোগ সাধনার প্রচলন ছিলো ।  হরপ্পা সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র মহেঞ্জোদারো তে একটি অতি উতকৃষ্ট মানের সিলমোহর পাওয়া গেছে যাকে ঐতিহাসিকেরা আদিযোগী বা পশুপতি শিবের সঙ্গে তুলনা করেছেন। উক্ত সিলমোহরে লক্ষ্য করা যায় একজন যোগী পদ্মাসনে উপবিষ্ট হয়ে তপস্যা করছেন। যোগী পুরুষটির দেহের বিবরণ কোনো কোনো সিলমোহরে ত্রিমুখ অঙ্কিত হয়েছে আবার কোথাও একমুখ  বিশিষ্ট যোগী। ওনাকে ধ্যানরত যোগী রূপে দেখানো হয়েছে। তিনি পদ্মাসনে বসে আছেন, নাগ্রাসে তাঁর দৃষ্টি, তিনি উর্দ্ধলিঙ্গ। তাঁর মাথায় শিং ও মুকুট, কোমোরে আবরণ। তাঁর চারিপাশে চারটি পশু, যথা- হাতি, বাঘ, গন্ডার ও মহিষ। তাঁর পায়ের কাছে একটা পশু হরিণ। এই যোগী পুরুষের আরও যে সমস্ত সিলমোহর আবিষ্কৃত হয়েছে তাতে যোগীর পতিকৃতি আছে কিন্তু পশু নেই, আছে একগুচ্ছ ফল, ফুল বা পাতা, যেনো যোগীর মাথা থেকে তারা উদ্গত হচ্ছে। এই যোগীর কয়েকটি বৈশিষ্ট হলো কোথাও তিনি ত্রিমুখ বিশিষ্ট আবার কোথাও একমুখ বিশিষ্ট। তিনি পশুপরিবৃত অবস্থায় যোগ সাধনা করছেন। হিন্দু ধর্মের শিবের সাথে ওই যোগী পুরুষের মিল পাওয়া যায়। শিবও হলেন পরমযোগী, পশুপতি। এই সব কারনের জন্য ওই যোগী কে পশুপতি শিব বা আদিযোগীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পুরাণে শিবকে কিরাত বা বাধ্যরূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সিলমোহরেও হয়তো শিবের কিরাতরূপের উল্লেখ আছে। ওই সিলমোহর টির বিবরণ হলো মোহরটি আকারে বর্গাকার, talc জাতীয় পদার্থাবৃত, সিলমোহরটির দৈর্ঘ্য ৩.৫৬ সেমি., প্রস্থ ৩.৫৩ সেমি., আর পুরুত্ব ০.৭৬ সেমি., জন মার্শাল এটিকে পশুপতি শিব বলে আখ্যা দিয়েছেন। যেই সভ্যতায় পরমযোগী ভগবান শিবের উপাসনা করা হয় সেই সভ্যতায় যোগের চর্চা হবেনা সেটা অবান্তর। যোগ সাধনা মানুষের মনের উদ্যমতাতে বৃদ্ধি করে তাই প্রতিটি সভ্যতায় যোগ সাধনা হতো।  ওই আদিযোগীর সিলমোহর ছাড়াও আরও অনেক নিদর্শন পাওয়া গেছে। যেগুলি তে দেখা গেছে মানুষ যোগের বিভিন্ন নিয়ম এবং আসন করছে দেহকে সুঠাম বানানোর জন্য। আবারও কিছু কিছু নির্দশন পাওয়া গেছে যেখানে যোগ চর্চার অঙ্গ সূর্য নমস্কার করতে দেখা গেছে। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে ওই সভ্যতায় যোগ কতোখানি গ্রহনযোগ্য ছিল। পতঞ্জলির যোগ সূত্র ঃ হিন্দু দর্শনে মোট ৬য় টি সাখা বিদ্যমান। যোগ ওই দর্শন শাস্ত্রের এক অঙ্গ। যোগ সাংখ্য দর্শন সাখার সঙ্গে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। আধুনিক কালে যে সমস্ত যোগ আমরা জানি তার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়েছেন ঋষি পতঞ্জলি। পতঞ্জলি তাঁর সাংখ্য দর্শনের অন্যতম যোগ শাস্ত্র গ্রন্থে যোগের বিবরণ নিরূপণ করেছেন। তাঁর এই সাখা সাংখ্য দর্শনের থেকে অনেকটা ইশ্বরমুখী ছিলো। ম্যাক্স মুলারের মতে, ❝ The two philosophies were in popular distinguished from each other as Sankhya without a lord ❞। পতঞ্জলি কে আনুষ্ঠানিক যোগ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা রূপে গণ্য করা হয়। পতঞ্জলির যোগ শাস্ত্রে মন কে নিয়ন্ত্রন করার  একটা পন্থার কথা বলা রয়েছে, যা রাজযোগ নামে পরিচিত। পতঞ্জলি তাঁর যোগসূত্র গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ে যোগের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন সেটিকেই তাঁর সমগ্র গ্রন্থের সংজ্ঞামূলক সূত্র রূপে চিহ্নিত করা হয়। “योगः चित्तवृत्ति निरोधः ” যোগ সূত্র ১.২ ঃ  পতঞ্জলি রচিত যোগসূত্র গ্রন্থের একটি সূত্র হলো ❝ যোগঃ চিত্তবৃত্তি নিরোধঃ ❞। এই সংজ্ঞার মধ্যে তিনটি সংস্কৃত শব্দের অর্থ্য নিহিত রয়েছে। আই.কে তৈমিনির অনুবাদ অনুসারে যোগ শব্দের অর্থ হলো ‘ চিত্ত ’ পরিবর্তন ‘ বৃত্তি ’, নিবৃত্তি ‘ নিরোধঃ ’। সংজ্ঞায় নিরোধ  শব্দের যোগ সূত্রে বৌদ্ধ ব্যবহারিক পরিভাষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটির নির্দেশক। এই শব্দটি থেকে প্রমানিত হয় যে পতঞ্জলির বৌদ্ধ ধ্যানধারনার সম্যক অবগত ছিলেন এবং তা নিজের প্রবর্তিত কাব্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। স্বামী বিবেকানন্দ এই সূত্র টির ইংরেজি অনুবাদ করেন।  পতঞ্জলি রচিত যোগ অষ্টাঙ্গ যোগ নামে পরিচিত। এটি যোগ চর্চার প্রচলিত বিধি। এই অষ্টাঙ্গ যোগের ধারণাটি পাওয়া যায় যোগসূত্রের ২য় খন্ডের ২৯তম সূত্রে। রাজযোগের প্রচলিত প্রধান ৮টি অঙ্গ অষ্টাঙ্গ যোগ নামে পরিচিত। এই অষ্টাঙ্গ যোগ হলো —1. যম – পতঞ্জলি রচিত অষ্টাঙ্গ যোগের প্রথম অঙ্গ হলো যম। এই অঙ্গে তিনি মানুষ কে অহিংস, সত্যবাদিতা, অস্ত্র না ধরা, ব্রহ্মচর্য পালন এবং অপরের জিনিস অধিগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। 2. নিয়ম – পতঞ্জলি রচিত যোগসূত্র গ্রন্থের ২য় অঙ্গ হলো নিয়ম। এই নিয়মে তিনি কতোগুলো কর্তব্য নিয়ম পালনের কথা বলেছেন। তিনি এই অঙ্গে মানুষ কে পবিত্রতা, আত্মসন্তুষ্টি, তপস্যা, সাধূ সঙ্গ লাভ, ইশ্বরে মনোনিবেশ করার কথা বলেছেন। তিনি এই নিয়ম গুলি পালন করার কথা বলেছেন। যম ও নিয়ম এই দুই অঙ্গের প্রধান উদ্দেশ্য হলো ইন্দ্রিয় এবং চিত্তবৃত্তি গুলিকে দমন করা এবং এগুলির অর্থ অন্তর্মুখী করে ইশ্বরের সঙ্গে যুক্ত করা। 3. আসন – পতঞ্জলি তাঁর এই অঙ্গে যোগ অভ্যাস করার জন্য যে ভঙ্গিমায় শরীরকে রাখলে শরীর স্থীর থাকে অথচ কোনোরূপ কষ্টের কারণ ঘটেনা, শরীর সুখজনকভাবে অবস্থান করার পক্রিয়াই হলো আসন। এই আসন গুলির দৈনিক অভ্যাস করলে দেহের নানা রোগ দূরিভুত হয়। ঔউজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। প্রাণশক্তি বৃদ্ধি পায়। 4. প্রাণায়াম – প্রাণায়াম হলো যোগের মাধ্যমে প্রাণ বায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলেছেন। তিনি এই পক্রিয়ার মাধ্যমে জীবন শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলেছেন। 5. প্রত্যাহার – যে সমস্ত বিষয় মানুষের মনকে বিচলিত করে সেই সকল বিষয় কে তিনি বর্জন করতে বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন আসন ও প্রাণায়ামের মাধ্যমে মানুষের অবিচল মনকে সংযত করে মনোসংযোগ করা, তিনি ষড় রিপু কে বর্জন করতে বলেছেন। এরূপ অবস্থায় ইন্দ্রিয় গুলোকে বাহ্যবিষয় থেকে প্রতিনিবৃত্তি করে চিত্তের অনুগত করাই হলো প্রত্যাহার। 6. ধারণা ঃ কোন একটি নিদৃষ্ট বিষয়ে মনকে স্থির করার পক্রিয়া, কোন বিশেষ বস্তুতে, জিনিসে, আধারে চিত্তকে মনোনিবেশ করার পক্রিয়াকে ধারণা বলে। 7. ধ্যান ঃ- শুদ্ধ অর্থে মনকে ধ্যেয় বিষয়ে বিলিন করা, যে বিষয়ে চিত্ত নিবিষ্ট হয়, যে বিষয় মানবচিত্তে একাত্মতার জন্ম দেয় তাহলে সেই বিষয় কে যোগ ধ্যান বলে। এই একাত্মতার অর্থ অবিরতভাবে চিন্তা করাকে ধ্যান বলে। প্রাচিন মুনি ঋষিরা এই ধ্যানে সারাক্ষন নিমগ্ন থাকতেন। এই ধ্যানের মাধ্যমে তারা তাদের ইষ্ট দেবতার সংস্পর্শে থাকতো। এবং তারা সিদ্ধিলাভ করতেন। 8. সমাধি ঃ- ধ্যানের মাধ্যমে চৈতন্য বিলোপ সাধন। ধ্যান যখন গাঢ় হয় তখন ধ্যানের বিষয়ে চিত্ত এমনভাবে নিবিষ্ট হয়ে পড়ে যে, চিত্ত ধ্যানের বিষয়ে লীন হয়ে যায়। এই অবস্থায় ধ্যান রূপ পক্রিয়া ও ধ্যানের বিষয় উভয়ের প্রভেদ লুপ্ত হয়ে যায়। চিত্তের এই প্রকার অবসস্থাকে সমাধি বলে। সমাধি ২য় প্রকার সবিকল্প এবং নির্বিকল্প সাধকের ধ্যানের বস্তু ও নিজের মধ্যে পার্থক্যের অনুভূতি থাকলে তাকে নির্বিকল্প সমাধি বলা হয়। তখন তার মনে চিন্তার কোনো লেশ মাত্র থাকে না। এই সমাধি লাভ যোগের সর্বচ্চ স্তর। যা যোগীর পরম প্রাপ্তি।  এই শাখার মতে মানুষ যদি এই পক্রিয়ার চরমে উঠতে পারে তাহলে এই সমগ্র সংসার তার কাছে মায়া বলে মনে হয় না। প্রতিদিনের জহতকে সত্য বলে মনে করা হয়। এই অবস্থা ব্যাক্তি আত্ম জ্ঞান লাভ করে। তার আমিত্ব রহিত হয়।  প্রাচিন ঋষি মুনিরা বছরের পর বছর এই সমাধি অবস্থায় লীন থাকতো।  ববহির্জগতের সমগ্র চিন্তা ভাবনা থেকে কয়েক যোজন দূরে থাকতেন। ওনারা প্রকৃত যোগী। যোগের প্রকারভেদ : – পতঞ্জলি তাঁর যোগসূত্র গ্রন্থে যোগের প্রকারভেদ নিয়ে বর্ণনা করেছেন। যোগ প্রধানত ২য় প্রকার, রাজযোগ এবং হঠযোগ। হঠযোগের উদ্দেশ্য হলো শরীরকে সুস্থ, সবল ও দীর্ঘায়ু করা। হঠযোগীয় ধারণা কোনোরূপ শক্তিকে আরও করতে হলেই নিজের শরীরকে নিজের আয়ত্তে আনতে হবে। সাধারণ মানুষ যোগ বলতে হঠযোগের ব্যায়াম গুলিকে বোঝায়। রাজযোগের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন সাধন। এই পরমাত্মার সাথে মিলনের ফলে জীবের মোক্ষলাভ হয়।  হঠযোগ হলো মানব শরীরকে সুস্থ, সবল রোগনিরাময় ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। হঠযোগের মাধ্যমে সিদ্ধিলাভ না হলেও এই যোগ সাধনে মানুষের বাহ্যিক পরিবর্তন করে।  হঠযোগের সাথে রাজযোগের অতি নিবিড় সম্পর্ক যুক্ত। যোগ সাধনার পূর্বসর্ত হলো নিজের  দেহকে সুস্থ রাখা, তামসিক চিন্তা থেকে নিজেকে বিরত রাখা, ষড় রিপু কে নিজের বসে আনা। যার ফলে যোগ সাধনার মার্গ সরল হয়। পতঞ্জলির শ্লোক ধরেই বলা যায় যে — “ शरीरमाद्यां खलु धर्मसाधनम् ” ‌। অর্থ্যাৎ শরীর মন সুস্থ না থাকলে জাগতিক বা পারমার্থিক কোন কাজই সুস্থ ভাবে করা যায় না। শরীর যদি সুস্থ স্বাভাবিক না থাকে তাহলে কার্যসিদ্ধি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই আগে শরীর কে সুস্থ রাখা প্রয়োজন। কুণ্ডলিনী যোগ সাধনা:  যোগ শাস্ত্রে হঠযোগ এবং রাজ যোগ ছাড়াও আরও একপ্রকার যোগ সাধনার উল্লেখ আছে। সেটি সবার থেকে কঠিন যোগ সাধনা ‘ কুণ্ডলিনী যোগ ’। এই যোগ সাধনার উল্লেখ উপঅনিষদে পাওয়া যায়। এই যোগ সাধনার প্রধান উদ্দেশ্য হলো জীবন প্রদানকারী বুনিয়াদি শক্তির সক্রিয়তা বৃদ্ধি করা।  আমাদের দেহে যে পরিমান শক্তি সঞ্চিত থাকে তার প্রায় ৯৯ ভাগ শক্তি আমাদের মুলাধার চক্রে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। এই অবশিষ্ট শক্তিই হলো আমাদের প্রাণ বায়ু।  কঠোর নিয়ম নিষ্ঠা পূর্বক যোগ সাধনা করার ফলে এই ৯৯ ভাগ বুনিয়াদি শক্তি ব্রহ্ম স্তর, বিষ্ণু স্তর অতিক্রম করে সহশ্রার চক্রে গিয়ে পৌঁছোয়। আমাদের মেরুদণ্ডের নিচে এই কার্য কুণ্ডলী আকারে চলতে থাকে। বুনিয়াদি শক্তি তীব্র যোগ সাধনার মাধ্যমে দেহে সঞ্চিত নিস্ক্রিয় শক্তিতে সক্রিয় করে তোলার পক্রিয়া।  এই কুণ্ডলিনী যোগ কে শাস্ত্রে বিষধর সাপ এর তুলনা করা হয়েছে। কুণ্ডলীনি যোগ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করার ফলে যোগীর মোক্ষপ্রাপ্তি ঘটে। এই সাধনা অত্যন্ত কষ্টকর। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম পর্বের যোগ সাধনা : যোগ সাধনা মানব সভ্যতার গোড়ার সময়ের থেকে চলে আসছে। যোগ প্রজন্মের পর প্রজন্মে বিবর্তিত হয়ে চলেছে। সেই প্রাক্-বৈদিক পর্বের যোগ সাধনা সেখান থেকে ঋক বৈদিক এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের যোগ সাধনা মানুষকে প্রভাবিত করেছে। এই পৃথিবী তে আবির্ভূত হয়েছিলেন রাম কৃষ্ণের মতো যুগপুরুষ রা যাঁরা তাঁদের কর্মের মাধ্যমে মানুষ কে যোগ সাধনায় উদবুদ্ধ করেছিলেন।  পরবর্তী কালে আজ থেকে প্রায় ২৭০০ বছর আগে কপিলাবস্তু নগরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সিদ্ধার্ত। অবশ্য তিনি গৌতম বুদ্ধ নামেই বিশেষ পরিচিত। ওনার জীবনের মূল মন্ত্রই ছিল যোগ আর বৈরাগ্য। তিনি সাধারণ জীবনযাপন করেই যোগ সাধনা করার কথা বলেছিলেন। তিনি মনে করতেন ইশ্বরকে লাভ করার জন্য কঠোর নিয়ম পালন করার কোনো মানে হয়না। তাই তাঁর প্রবর্তিত ধর্ম ‘ বৌদ্ধ ’ ধর্মে যোগ সাধনার এক নতুন ধারা প্রবর্তন করেন যা অনেকটা সহজ সরল এবং সাধারণ মানুষের কাছে অনেক গ্রহণীয়। তাঁর প্রবর্তিত ধর্ম দুটি ভাগে বিভক্ত হিনজান এবং মহাজান।  ওই একই সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের মতো আরও একপ্রকার ধর্মমত প্রচারিত হতে শুরু করে। অতি সাধারণ পন্থাতে যোগ সাধনা, ইশ্বর প্রাপ্তির মার্গ, যোগ সাধনার নতুন ধারার প্রচার এই সব কারণে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মহাবীর জৈনের প্রচারিত ধর্ম জৈন ধর্ম। এই ধর্মের নিয়ম গুলি বৌদ্ধ ধর্মের থেকে অপেক্ষাকৃত একটু জটিল। এই দুই ধর্ম মত তৎকালীন রাজা দের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিল। বৌদ্ধ এবং জৈন গ্রন্থ গুলিতে যোগ সাধনার নতুন ধারার প্রমান পাওয়া যায়। আদি শংকরাচার্য প্রবর্তিত যোগ :  পতঞ্জলি রচিত যোগসূত্র গ্রন্থে প্রবর্তিত যোগসাধন প্রনালী অত্যন্ত জটিল এবং সময় সাপেক্ষ। সাধারণ মানুষ যাতে যোগের গুঢ় তত্ত্ব গুলি অনুধাবন করতে পারে এবং যাতে যোগ সাধনায় প্রবৃত্ত হতে পারে তার জন্য আদিগুরু শংকরাচার্য এক নতুন যোগ সাধন প্রনালীর রচনা করেন, যার পন্থা গুলি ছিলো সহজ সরল এবং সাধারণ মানুষের বোধগম্য। তিনি বিভিন্ন গ্রন্থ, শাস্ত্র গুলিতে বর্ণিত যোগ মার্গ গুলিকে একত্রিত করেন। তিনি হঠযোগ পালনের কথা বলেন। তিনি দেহ কে সুস্থ সবল করে ইশ্বরের সাধনায় মনোনিবেশ করার কথা প্রচার করেন। তাঁর এই ভাবধারায় অনেকে অনুপ্রাণিত হয়ে যোগ সাধনা সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহন করেন। তিনি সন্নাসীদের একত্রিত এক হিন্দু মহাসেনা গঠন করেন যারা হিন্দু ধর্মকে রক্ষার জন্য উদ্যত থাকেন। এই ধারাকে মনে রেখে এখনও কুম্ভমেলা পালিত হয়, যেখানে সব সাধূরা এসে একত্রিত হন আর নিজেদের যোগ প্রদর্শন করেন। ভক্তি যোগ : এখনও পর্যন্ত যতো প্রকার যোগসাধনা, যোগী, ধর্ম নিয়ে আলোচনা করা হলো তার প্রত্যেকটাতেই অতি কঠিন সাধন মার্গের কথা বলা হয়েছে। যম, নিয়ম আসন, প্রাণায়াম প্রভৃতি নিয়ম নিষ্ঠা পালনের মাধ্যমে মোক্ষলাভ করার পন্থা বলা আছে যা সবার কাছে সমান গ্রহণযোগ্য ছিল না।  ১৪দশ শতকে এই গতানুগতিক ধারাকে বর্জন করে মোক্ষপ্রাপ্তির অতি সহজ সরল পন্থার প্রচার করেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু। ইনি গৃহি মানুষ দেরও ইশ্বর সাধনার জন্য ভক্তিযোগের কথা বলেন। এই যোগ সাধনায় মানুষকে গৃহত্যাগী, বৈরাগ্য ধারণ করার প্রয়োজন ছিলো না। মানুষ গৃহে বসেই ইশ্বরের নাম কীর্তনের মাধ্যমে ইশ্বর সাধনার কথা বলেন। তিনি ইশ্বর প্রাপ্তির পন্থা হিসেবে ইশ্বরের নাম শ্রবণ, কীর্তন এবং ইশ্বরের চরনে আত্মনিবেদনের কথা বলেন। এই যোগ প্রণালী বহু মানুষের সমর্থন লাভ করে।  মানব সভ্যতা যত উন্নত হতে শুরু করে তত সভ্যতার ভাবধারার অনেক পরিবর্তন দেখা দেয়। এই পরিবর্তিত ভাবধারার ফলে তার প্রভাব যোগ সাধনার ওপর গিয়েও পড়েছিল। খ্রীষ্টিয় ৫ম শতকে মানুষ তন্ত্র সাধনা র দিকে মোনোনিবেশ করতে থাকে। মানুষ হঠযোগ থেকে বিরত থেকে যাগ যজ্ঞে আকৃষ্ট হয়। যোগ সাধনার মাধ্যমে সিদ্ধিলাভ করে মোক্ষপ্রাপ্ত করাতে আকৃষ্ট হয়।  তন্ত্রের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের সমস্ত রহস্য কে আয়ত্ব করার প্রবণতা বাড়ে। মন্ত্র, তন্ত্র, প্রাণায়ামের মাধ্যমে এই যোগ সম্পাদন করা হতো। এই তন্ত্র সাধনাতে সিদ্ধি লাভ করলে যোগী অনেক মহাজাগতিক শক্তি লাভ করতো। এর বিবরণ ১০ শতাব্দীর গ্রন্থ গুলি থেকে পাওয়া যায়। এই তান্ত্রিক ধারা ক্রমশ বুদ্ধ এবং জৈন ধর্মে প্রবেশ করে এবং নতুন এক যোগ সাধন মার্গের সূচনা করে। এই সাধনা তে অনেক নতুন দেব দেবীর উপাসনা করা শুরু হয়। এই সাধন প্রনালী জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও সাধারণ মানুষ  তন্ত্র সাধনার থেকে দূরে থাকতো। আধুনিক পর্বের যোগ সাধনা :  প্রাচিন ভারতীয় এই যোগ সাধন প্রনালীটি ধীরে ধীরে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এই যোগ বহির্বিশ্বের সমান ভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। উদাহরণ স্বরূপ প্রতিবেশী রাষ্ট্র চিনে এই যোগ ধারা বহুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।  আধুনিক কালেও অনেক যোগীপুরুষ অবতীর্ণ হয়েছিলেন যাদের জীবন প্রনালীর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল যোগ সাধনা। এমনই একজন যোগী হলেন বাবা লোকনাথ। উনি খুব ছোট বয়স থেকেই ইশ্বরচিন্তা এবং যোগ সাধনায় মোনোনিবেশ করেন। উনি যোগ মার্গে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন। তিনি যোগের তত্ত্ব গুলো অনেক সহজ সরল ভাবে বুঝিয়েছিলেন। কথিত আছে নাকি উনি নাকি খালি গায়ে হিমালয়ে উঠতে পারতেন। যোগ সাধনার ফলে লোকনাথ ব্রহ্মচারী ১৪৫ বছর বেঁচে ছিলেন।  এই যোগ সাধনা ব্রিটিশ দেরও প্রভাবিত করতে থাকে। উনবিংশ শতকেও একজন যুগবতারের  আবির্ভাব ঘটেছিল। উনি রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, যিনি তাঁর ভাবরসে গোটা জগৎ কে মাতিয়ে রেছেছিলেন। তিনি তাঁর ভক্তিরসে মা কালীর দর্শন পেয়েছিলেন। তিনি তাঁর ভক্তিভাবে নব প্রজন্মকে প্রভাবিত করেছিল। অনেকে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করেছিলেন। তিনি অনেক সহজ সরল ভাবে বোধগম্য করাতে পারতেন। ওনার ভাব ধারায় প্রভাবিত হয়ে বিবেকানন্দ উনবিংশ শতকের শেষার্ধে ইওরোপে হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্য প্রচার করতে যান। উনিও অনেক সহজ সরল পক্রিয়াতে যোগ সাধনার কথা বর্ণনা করেন। স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৭ সালে শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে সনাতন ধর্মকে উপস্থাপন করেন। উনি হিন্দু ধর্মকে গোটা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেন। তাঁর এই উপস্থাপনার ফলে বহির্বিশ্বের কাছে হিন্দু ধর্ম প্রাধান্য লাভ করেছিল। উপসংহার: যোগ সম্বন্ধে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া হয় যে, যোগ জন্ম মৃত্যুর মধ্যে যে অন্তরায় তার পরিচয়বাহক। অর্থাৎ সুস্থ জীবন যাপনের পরিচায়ক। মানুষের মনে অশান্তি যতদিন মানব সভ্যতার যতদিন মানসিক বিকাশ ঘটেছে ততদিন থেকে বর্তমান। ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের চিন্তা শক্তি উন্নত তর হয়েছে। আর ততদিন থেকেই এই সংসারে মন কে শান্ত করার জন্য যোগ অতীতেও ছিলো, বর্তমানেও আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই বলাই যায় যোগ সাধনার না আছে আদি না আছে অন্ত শুধু সময়ের সাথে সাথে বিবর্তিত হয়েছে।  মানুষের মনকে সংযত করতে, মনে বৈরাগ্যভাব জাগরিত করতে যোগ অবসম্ভাবি। হ্যাঁ বর্তমান কালে মূলত হঠযোগ প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। দেহ ও মনকে সুস্থ রাখার জন্য। বিভিন্ন সংস্থা এতে উদ্যোগী হয়েছে। Meditation এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার মারণ ব্যাধি নিরাময় হয়। প্রাণায়াম, আসন ইত্যাদির মাধ্যমে অনেক পুরোনো পুরোনো রোগ নিরাময় করা সম্ভব হচ্ছে। আর এই ভাবে যোগ সাধনা গোটা বিশ্ব জুড়ে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখে যাবে।  ~ সমাপ্ত ~

Tags: International Yoga DayThe Indian Roveryogaযোগ সাধনা
Previous Post

“যোগ ” – শান্তিক্ষেত্র

Next Post

The Pandemic Covid-19: Life, Society and Culture

Next Post
edit post

The Pandemic Covid-19: Life, Society and Culture

Please login to join discussion

Categories

  • Privacy Policy
  • Terms and Conditions
  • Disclaimer for The Indian Rover
  • Sitemap
  • Follow us on

© 2022 JNews - Premium WordPress news & magazine theme by Jegtheme.

No Result
View All Result
  • Home
  • Archives
    • Archives
    • The Indian Rover ( Issue: December, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: October, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: June, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: March, 2022)
    • The Indian Rover (Issue: December, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: November, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: October, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: September, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: August, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: July, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: June, 2021)​
    • The Indian Rover (Issue: May, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: April, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: March, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: Feb, 2021)
    • The Indian Rover (Issue: Jan, 2021)
  • Categories
    • Finance
    • Science
    • Sports
    • Non Fiction
  • About
  • Contact Us
  • Submit Guest Post
    • Login
    • Account
    • Dashboard
  • Announcement

© 2022 JNews - Premium WordPress news & magazine theme by Jegtheme.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In